ইসরায়েলিদের ‘সামরিক ও গোয়েন্দা এলাকা’ এড়িয়ে চলার আহ্বান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ইরানের অব্যাহত হামলার মধ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইসরায়েলিদের 'সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা রয়েছে এমন এলাকা' এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আব্বাস আরাগচি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, ইরান সঠিকভাবে একটি ইসরায়েলি কমান্ড ও গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে। যদিও তিনি জায়গাটির নাম উল্লেখ করেননি।
তার দাবি, বিস্ফোরণে পাশের সোরোকা মেডিক্যাল সেন্টারও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে গাজায় আহত ইসরায়েলি সেনাদের চিকিৎসা চলছিল।
অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, ইরান সরাসরি হাসপাতালটি লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে। তবে ইরান বলছে, তারা পাশে থাকা ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
আব্বাস আরাগচি বলেন, 'গত সপ্তাহে ইসরায়েল অবৈধ যুদ্ধ শুরু করার পর শত শত নিরীহ ইরানিকে হত্যা করা হয়েছে।ইরানের সেনাবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালানো অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া অব্যাহত রাখবে।'
ইসরায়েলি হামলার মুখে জনগণকে দৃঢ় থাকার আহ্বান খামেনির
ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে ভয় না পেয়ে দৃঢ় থাকতে ইরানের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এই আহ্বান জানান খামেনি। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, 'শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না।' তিনি আরও বলেন, 'আপনারা এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করেছেন, তা অব্যাহত রাখুন; সেই আচরণই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যান।'
এদিকে ইরানের পাল্টা হামলার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলের সহায়তা চাওয়ার বিষয়টিকে তেল আবিবের দুর্বলতার লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
খামেনি বলেছেন, এটা সত্য যে জায়নিস্ট শাসনের মার্কিন বন্ধুদের এখন হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এ ধরনের কথা (সাহায্য চাওয়া) বলতে হচ্ছে—যা প্রমাণ করে, ওই (ইসরায়েল) শাসনব্যবস্থা কতটা দুর্বল ও অক্ষম।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পুতিন-শি'র ফোনালাপে যেসব কথা হলো
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ফোনালাপ হয়েছে। ফোনালাপে তারা ইরানে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সংঘাত নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি ইউশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, 'পুতিন ও শি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য মানদণ্ড লঙ্ঘন করছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।'
তিনি আরও বলেন, 'ইরানের পরমাণু কর্মসূচিসহ বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সামরিক সমাধান নেই—এ বিষয়ে রাশিয়া ও চীন একমত। এ সমস্যার সমাধান কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়েই হতে পারে।'
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে ফোনালাপে শি বলেছেন, এ অঞ্চলের 'বিশেষ প্রভাবশালী' 'প্রধান রাষ্ট্রগুলোর' উচিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা, যাতে সংঘাত নিরসন করা যায়।
শি আরও বলেন, 'যুদ্ধরত পক্ষগুলো—বিশেষ করে ইসরায়েল—যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাক; যাতে পরিস্থিতি আরও না খারাপ না হয় এবং যুদ্ধ অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়ে।'
শি বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং ইসরায়েল ও ইরানকে অন্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ জানান।
রাশিয়া আগে থেকেই সতর্ক করে আসছে যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত যদি আরও তীব্র হয়, তবে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মস্কো যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা ইসরায়েলের হামলায় অংশ না নেয়।
গত কয়েক দিন ধরে পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বারবার জানিয়েছেন, রাশিয়া যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার প্রস্তাবে কেউ সাড়া দেয়নি।
আজকের ফোনালাপে পুতিনের এ প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছেন শি। ইউশাকভ বলেন, 'শি এ প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। কারণ, তিনি মনে করেন এটা সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে।'
তবে চীনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে শি জিনপিংয়ের এই সমর্থনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
আগামী দিনগুলোতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন বলেও সম্মত হয়েছেন এ দুই নেতা।
'অভিযান শেষে আর কোনো পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি থাকবে না': নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক হুমকি 'অপসারণ' করবে ইসরায়েল।
সোরোকা হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'এই সামরিক অভিযানের শেষে ইসরায়েলের প্রতি আর কোনো পারমাণবিক হুমকি থাকবে না, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিও থাকবে না।'
নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে 'খুব শক্তভাবে আঘাত' করেছে।
সাংবাদিকরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিই কি ইসরায়েলের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু, তখন তিনি জবাব দেন, 'কেউই নিরাপদ নয়।'
নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের 'অবিশ্বাস্য' অংশীদারিত্বের প্রশংসা করে বলেন, 'আমি প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে কথা বলি।'
তিনি বলেন, 'তিনি [ট্রাম্প] দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, স্পষ্ট ও অটল। তিনি বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না। আর সেটা নিশ্চিত করতে হলে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতেই হবে।'
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'তিনি [ট্রাম্প] কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু ইরান কেবল সময়ক্ষেপণ করেছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সময়ক্ষেপণ করিয়ে লাভ নেই।'
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, 'এটা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই অনেক সহায়তা দিচ্ছে।'
'বেঁচে থাকার অধিকার নেই': ইরানের মিসাইল হামলার পর খামেনিকে হত্যার হুমকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে 'হত্যা' করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি পত্রিকা ইদিয়োত আহারোনোত-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেন, 'এ ধরনের একজন মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।'
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সোরোকা হাসপাতাল এলাকায় আঘাত হানে। যদিও ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, হাসপাতাল নয়, হাসপাতালের পাশেই একটি সামরিক স্থাপনাই ছিল মূল লক্ষ্য।

তবে ইসরায়েলি পক্ষ বলছে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দিয়ে খামেনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ আরও বলেন, 'ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করাই যার উদ্দেশ্য, তাকে আর পৃথিবীতে থাকতে দেওয়া যায় না।'
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল সোরোকা হাসপাতালের পাশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদরদপ্তর। তাদের দাবি, বিস্ফোরণের তরঙ্গে হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানেই অনেকে আহত হন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের একাধিক ওয়ার্ড 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মহাপরিচালক শ্লোমি কোদেশ।
বিবিসিকে তিনি বলেন, 'পুরো হাসপাতালজুড়েই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—ভবন, কাঠামো, জানালা, ছাদ—সবখানে ধ্বংসের চিহ্ন রয়েছে।'

হামলার আগে হাসপাতালের উত্তর পাশের পুরনো সার্জিক্যাল ভবনটি থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান কোদেশ। 'এই ভবনটি যেহেতু পুরোনো, তাই গত কয়েকদিন ধরেই আমরা এটি খালি করে রেখেছিলাম। হামলার সময় সেটি ফাঁকা ছিল।'
তবে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ, যেখানে তখনও রোগী ও কর্মীরা অবস্থান করছিলেন, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
'হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। অধিকাংশই হাসপাতালের কর্মী ও রোগী। মূলত ভাঙা কাচ, ছাদ ধসে পড়া ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণেই তারা আহত হন।'
শ্লোমি কোদেশ আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে সোরোকা মেডিকেল সেন্টার থেকে ২০০ জনের বেশি রোগীকে অন্য মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে, এবং হাসপাতালের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করছে বিশেষজ্ঞ দল।
শুক্রবার জেনেভায় ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা করবেন ইউরোপীয় মন্ত্রীরা
জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা করতে যাচ্ছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন একটি জার্মান কূটনৈতিক সূত্র।
সূত্র জানায়, মন্ত্রীরা প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কাল্লাসের সঙ্গে জার্মানির জেনেভায় স্থায়ী মিশনে বৈঠক করবেন। এরপর তারা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ আলোচনা করবেন।
ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের ওপর ব্যাপক সামরিক হামলা চালানোর পর এবং এর জবাবে ইরান একের পর এক ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কায় এই ইউরোপীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও স্পষ্ট করেননি, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যোগ দেবে কি না। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
জার্মান ওই সূত্র জানায়, ইরান ও ইউরোপীয়দের মধ্যকার আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে হবে। এই আলোচনার লক্ষ্য ইরানকে নিশ্চিত করা, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার পরে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের গঠনমূলক সংলাপও অনুষ্ঠিত হবে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে নস্যাৎ করা। অন্যদিকে, ইরান দাবি করে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সামরিক উদ্দেশ্যে নয়।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স এই সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার পক্ষে মুখ খুলে তেহরানকে ক্ষুব্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানিদের উচিত উত্তেজনা কমানো, না হলে আরও বড় ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে।
অন্যদিকে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বুধবার ইরানের নেতাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আশ্বাস দিয়ে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেছেন, 'আলোচনার টেবিলে বসার জন্য কখনও দেরি হয় না।'
মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও জাহাজ সরিয়ে নিল যুক্তরাষ্ট্র; ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত অন্তত ৩০
দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ঘাঁটি থেকে কিছু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নিয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও স্পষ্টভাবে জানাননি—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা করবে কি না। ছয় দিন ধরে চলা বিমান হামলার মধ্যে ইরানের রাজধানী ছাড়ছেন ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ নিউজ বুধবার জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা ইরানে আসন্ন হামলার সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে এই পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কয়েকটি সূত্র উইকএন্ডে হামলা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
বুধবার সকালে হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। 'আমি এটা [ইরানে হামলা] করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। মানে কেউই জানে না আমি কী করব,' বলেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস এক সতর্কবার্তা জারি করেছে। সেখানে তাদের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সাময়িকভাবে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা।
দূতাবাস কর্মী ও কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, 'চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও সরঞ্জামকে নিরাপদ রাখা। তবে ঠিক কতগুলো বিমান ও জাহাজ সরানো হয়েছে এবং সেগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।
একজন কর্মকর্তা বলেন, আল-উদেইদ ঘাঁটির যেসব বিমান শক্তিশালী সুরক্ষার আওতায় ছিল না, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাহরাইনের একটি বন্দরের জাহাজগুলোও সেখান থেকে সরানো হয়েছে। এই বন্দরেই যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর অবস্থান করে।

এই সপ্তাহে রয়টার্স প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র বিপুলসংখ্যক ট্যাংকার বিমান ইউরোপে পাঠিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আরও সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে।
এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থানরত একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে।
ইসরায়েল শুক্রবার থেকে ইরানে হামলা শুরু করেছে। জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত বুধবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সরাসরি জড়িত হয়, তাহলে ইরান কঠোর জবাব দেবে।
আরাকে (খন্দাব) ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লিতে ইসরায়েলের হামলা
আরাক শহরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে খন্দাবের ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানি স্টুডেন্ট নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হামলার আগে কর্তৃপক্ষ চুল্লি স্থাপনাটি খালি করে ফেলে। এখন সেখানে কোনো বিকিরণ ঝুঁকি নেই বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই গবেষণা চুল্লিটি আংশিক নির্মিত হয়েছে। আগে এটি 'আরাক' নামে পরিচিত ছিল। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাকে তেহরান জানিয়েছে, তারা আগামী বছর এ চুল্লি চালু করার পরিকল্পনা করছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, ডিউটেরিয়াম অক্সাইড মিশ্রিত এই ভারী পানি পারমাণবিক চুল্লি শীতল করার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে উপজাত পণ্য হিসেবে ওই পানি থেকে প্লুটোনিয়াম পাওয়া যায়। এই উপাদান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগে।
ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত
দক্ষিণ ইসরায়েলের বির শেবা শহরে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ হামলায় বির শেবার সরোকা হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হাসপাতালের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কারণে নয়, বরং বিস্ফোরণের তরঙ্গ থেকে হয়েছে। ইরানের গণমাধ্যম হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল হাসপাতালের পাশের একটি 'সংবেদনশীল' স্থাপনা ছিল বলে যে দাবি করেছিল, সেই দাবিকেই সমর্থন করে এটি।
বির শেবার পাশাপাশি তেল আবিবেও হামলা হয়েছে। তেল আবিবে অবস্থিত ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে ইরান হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প, তবে চূড়ান্ত নির্দেশ এখনও দেননি
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনিয়র সহকারীদের বলেছেন, তিনি ইরান হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন। তবে তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে কি না, তা দেখার জন্য এখনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। এ বিষয়ে অবগত তিনজন ব্যক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সামরিক বাহিনীকে দেওয়া ব্যক্তিগত নির্দেশনার পর থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, ইরানে হামলার সম্ভাবনা বিবেচনায় রয়েছে।
বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমার করণীয় সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি—আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একেবারে শেষ মুহূর্তে নিতে পছন্দ করি।'

ওই ব্যক্তিরা বলেন, ট্রাম্প আশা করছেন, ইসরায়েলের ছয় দিনব্যাপী চলমান হামলায় যুক্ত হওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি তেহরানকে তার দাবি মানতে বাধ্য করতে পারবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে, তবে এখনও তিনি এর বিরুদ্ধেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, একাধিক বিকল্প এখনও আলোচনায় রয়েছে। আর ইসরায়েল কীভাবে অভিযান পরিচালনা করছে, তা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন ট্রাম্প।
ইরান চুক্তি 'এখনও হতে পারে'; তেহরান 'কয়েক সপ্তাহেই' পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করত: ট্রাম্প
ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, সামরিক নেতৃত্ব ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করে। তারা এ অভিযানের নাম দিয়েছে 'অপারেশন রাইজিং লায়ন'। মঙ্গলবার পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানে ১ হাজার ১০০-র বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার দাবি করেছে। এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে থাকা আটটি ইরানি অ্যাটাক হেলিকপ্টার ও পশ্চিম ইরানে অবস্থিত ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো উপাদান।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানে হামলার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে, তবে প্রেসিডেন্ট এখনও কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরোধে সহায়তাতেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ভূমিকা সীমিত রেখেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জয়েন্ট চিফস অভ স্টাফের চেয়ারপারসন জেনারেল ড্যান কেইন হোয়াইট হাউসে একটি বৈঠকে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে ও সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত না হওয়ার দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ
ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত না হওয়ার দাবিও জানান তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন বহু আমেরিকান ও ইরানিয়ান-আমেরিকান।
এর আগে হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
শনিবার তুরস্কে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেবেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)–এর এক বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৫১তম কাউন্সিলের বিশেষ এই অধিবেশনে মূলত ইরানের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে আলোচনা হবে।
তুরস্ক ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে অবৈধ আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে, ইরান বৈধভাবেই আত্মরক্ষা করছে।