যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে কথাই বলতে চান না পুতিন

রাশিয়া ও ইরানের সম্পর্ক প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করতে পারে—এই সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। তিনি বলেন, তেহরানের নেতৃত্বের প্রতি ইরানের জনগণের সমর্থন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খোলাখুলিভাবেই ইঙ্গিত দেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক হামলা দেশটিতে 'শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন' ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, 'খামেনি কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন, তা ওয়াশিংটন জানে'. তবে তিনি বলেন, 'এখনই' তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেই।
পুতিনকে প্রশ্ন করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করলে তার প্রতিক্রিয়া কী হবে। জবাবে পুতিন বলেন, 'আমি এই সম্ভাবনা নিয়ে কথাই বলতে চাই না। আমি চাই না।'
পরে তাকে পুনরায় চাপ দেওয়া হলে পুতিন জানান, তিনি খামেনিকে হত্যার বিষয়ে কিছু মন্তব্য শুনেছেন। তবে, এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি রাজি নন।
রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থার সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন বলেন, 'ইরানে আজ যে জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে, তার মাঝেও আমরা দেখছি, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ঘিরে সমাজে ঐক্য দৃঢ় হচ্ছে।'
ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সব পক্ষেরই এমন একটি পথ খুঁজে বের করা উচিত–যাতে একদিকে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত হয়, অন্যদিকে ইসরায়েলও নির্ভেজাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি এই মন্তব্য করেন এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে বিমান হামলায় যোগ দেবে কি-না—তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে জল্পনা চলছে। এদিকে টানা ছয় দিনের বিমান হামলার মুখে ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে মানুষ দলে দলে শহর ছাড়ছে।
পুতিন জানান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মস্কোর পক্ষ থেকে সংঘাত নিরসনের পাশাপাশি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির প্রবেশাধিকার অটুট রাখার যে প্রস্তাব রয়েছে, সেটি তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে পুতিনের মন্তব্য
ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রশ্নে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তা আসল লক্ষ্য পূরণে সহায়ক কি-না, তা বিবেচনা করা উচিত।
তিনি জানান, ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো এখনো অক্ষত রয়েছে। পুতিন বলেন, 'এই ভূগর্ভস্থ কারখানাগুলো এখনো রয়েছে, এর কিছুই হয়নি।'
পুতিন আরও বলেন, 'আমার মনে হয়, সকলের উচিত বিরোধ বন্ধ করার উপায় খোঁজা এবং এই সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পথ বের করা। আমার মতে, এ ধরনের সমাধান অবশ্যই সম্ভব।'
ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষায় ইরানকে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহে রাশিয়া প্রস্তুত কি-না–এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তেহরানের সঙ্গে যে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে, তাতে সামরিক সহযোগিতার কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার কাছে কোনো সহায়তাও চায়নি।
এদিকে, রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বুধবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে মস্কো, কারণ তা মধ্যপ্রাচ্যকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সতর্ক করে বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা চালানো হলে তা পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
পুতিন আরও জানান, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতিরিক্ত দুটি চুল্লি নির্মাণে সহায়তাকারী রুশ বিশেষজ্ঞদের ওপর হামলা চালানো হবে না—এ মর্মে মস্কোকে আশ্বস্ত করেছে ইসরায়েল।
তিনি বলেন, 'ইরানের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে ইরানের স্বার্থ রক্ষা করতে রাশিয়া সক্ষম।'
পুতিন জানান, রাশিয়া ইরান থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ এবং দেশটির বেসামরিক জ্বালানি কর্মসূচির জন্য পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহে আগ্রহী।
'শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে ইরানের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগও সমাধান করা যেতে পারে,' বলেন পুতিন। 'আমরা আমাদের এ প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরানের অংশীদারদের সামনে উপস্থাপন করেছি।'