ব্যক্তিগতভাবে ইরান হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প, তবে চূড়ান্ত নির্দেশ এখনও দেননি
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনিয়র সহকারীদের বলেছেন, তিনি ইরান হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন। তবে তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে কি না, তা দেখার জন্য এখনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। এ বিষয়ে অবগত তিনজন ব্যক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সামরিক বাহিনীকে দেওয়া ব্যক্তিগত নির্দেশনার পর থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, ইরানে হামলার সম্ভাবনা বিবেচনায় রয়েছে।
বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমার করণীয় সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি—আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একেবারে শেষ মুহূর্তে নিতে পছন্দ করি।'
ওই ব্যক্তিরা বলেন, ট্রাম্প আশা করছেন, ইসরায়েলের ছয় দিনব্যাপী চলমান হামলায় যুক্ত হওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি তেহরানকে তার দাবি মানতে বাধ্য করতে পারবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে, তবে এখনও তিনি এর বিরুদ্ধেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, একাধিক বিকল্প এখনও আলোচনায় রয়েছে। আর ইসরায়েল কীভাবে অভিযান পরিচালনা করছে, তা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন ট্রাম্প।
হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনা এগোলেও ট্রাম্প হয়তো কূটনৈতিক পথেই সংকটের সমাধান করতে চাইতে পারেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি এটা [ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানে যৌথ হামলা] করতেও পারি, না-ও করতে পারি।' সেইসঙ্গে ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করে বলেন: 'আগামী সপ্তাহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে, হয়তো এক সপ্তাহও লাগবে না।'
তবে ইরান সরকার বলেছে, তারা সামরিক হুমকির মুখে কোনো আলোচনা করবে না এবং আক্রমণ হলে পাল্টা জবাব দেবে।
ইরানের জাতিসংঘ মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইরান চাপের মুখে কোনো আলোচনা করে না, চাপের মুখে কোনো শান্তি মেনে নেবে না। এবং অবশ্যই—একজন ব্যর্থ যুদ্ধবাজ, যিনি প্রাসঙ্গিক থাকার মরিয়া চেষ্টা করছেন, তার সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।' এ বক্তব্যে স্পষ্টত ট্রাম্পের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্য হতে পারে ইরানের সুরক্ষিত ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। ইসরায়েল এখনও এ স্থাপনায় হামলা চালায়নি। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা ছাড়া পর্বতের নিচে অবস্থিত এই স্থাপনায় হামলা করে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
ট্রাম্প যখন তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী তখন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে সামরিক শক্তি মোতায়েন অব্যাহত রেখেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিমান রিফুয়েলে সক্ষম ট্যাংকার প্লেন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম যুদ্ধজাহাজ, একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ ও উন্নত এফ-২২ যুদ্ধবিমান।
পিট হেগসেথ বুধবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করছে। কারণ ফোরদো স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে ইরান ওই অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন বাহিনী ও ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালাতে পারে।
সেনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটিতে সাক্ষ্যদানকালে হেগসেথে কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত হবে 'প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে'—এবং প্রকাশ্য ফোরামে তিনি এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে হেগসেথ বলেন, সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ বাহিনী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের হাতে থাকা সমস্ত সম্পদ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ড্রোন হামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক পদক্ষেপ না নিতে সতর্ক করেছে। বুধবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফোনালাপে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ 'যত দ্রুত সম্ভব' সংঘাত অবসানের আহ্বান জানান এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সমালোচনা করেন।
