মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি হাব’ গড়তে আন্তর্জাতিক ডেভেলপার নিয়োগ দেবে বেজা

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর অংশ হিসেবে মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এনএসইজেড) ৫০০ একর জমি আন্তর্জাতিক মাস্টার ডেভেলপারের (আইএমডি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
বেজা জানায়, জমি ভরাট, প্লট বরাদ্দ, উন্নত অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিবেশবান্ধব কারখানার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে উঠবে আধুনিক 'গ্রিন ফ্যাক্টরি হাব'। আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেড বা বেপজা ইকোনোমিক জোনের আদলে এই অঞ্চল পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হবে কোনো আন্তর্জাতিক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের হাতে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, "ছোট ছোট প্লট বরাদ্দের পরিবর্তে এখন বৃহৎ শিল্প এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এর অংশ হিসেবে ৫০০ একর জমি ডেভেলপ করে আধুনিক ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করবে আন্তর্জাতিক মাস্টার ডেভেলপার।"
তিনি আরও জানান, শিগগিরই এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি (আইআইএফসি)। সমীক্ষা শেষে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে এবং নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। এ উদ্যোগ সফল করতে দেশ-বিদেশে রোড শোসহ নানা প্রচারণা চালাবে বেজা।
আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক জানান, "এনএসইজেডে যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, তারা আগামী এক বছরের মধ্যে কারখানা নির্মাণের কাজে অগ্রসর হবেন।" সম্ভাব্য চার-পাঁচটি প্লট প্রত্যাহার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে দুটি জোনে প্রায় ১,৫০০ একর জমি সম্পূর্ণ কারখানা নির্মাণের উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এদিকে, বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বেজা ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্প্রতি একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করে। সামিটের অংশ হিসেবে ৬০ সদস্যের একটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি দল মিরসরাইয়ের এনএসইজেড পরিদর্শন করে।
এনএসইজেডে অগ্রগতি
বেজার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নজুড়ে প্রায় ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে এই শিল্প নগর। এর মধ্যে বেজা ইতোমধ্যে ১৭,৫০০ একর জমির দখল পেয়েছে।
এ পর্যন্ত বেপজা ইকোনোমিক জোনকে ১,১৩৮ একর, বসুন্ধরা গ্রুপকে ৫০০ একর, পিএইচপি গ্রুপকে ৫০০ একর, বিএসআরএমকে ১৯৮ একর, এসবিজি ইকোনোমিক জোনকে ৫০০ একর এবং ভারতীয় ইকোনোমিক জোনকে ৯০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বেজার তথ্য অনুযায়ী, বেপজা ইকোনোমিক জোনে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের কেমিকেল, স্টিল ও রেডিমিক্স—তিনটি কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পিএইচপি গ্রুপ জমি বুঝে পেয়েছে এবং বিএসআরএম মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজে কানেক্টিভিটি, ড্রেনেজসহ অন্যান্য ইউটিলিটি নিশ্চিত করা হচ্ছে, যদিও এখনো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, নিপ্পন অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, জাইহং মেডিকেল, আদানি, হেলথকেয়ার, উইলমার, ম্যারিকো, এসিআই, এসকিউ, ইফাদ অটোস লিমিটেড ইত্যাদি।
বেজার নির্বাহী বোর্ডের সচিব আহসান উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "শিকদার গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও গ্যাসমেন গ্রুপের কনসোর্টিয়াম এসবিজি ইকোনোমিক জোনের নামে বরাদ্দ দেওয়া ৫০০ একর জমির লিজ সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। প্লট বরাদ্দ নিয়েও অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
এদিকে, ভারতীয় ইকোনোমিক জোনের বাস্তবায়নও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। আদানি পোর্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অনিশ্চয়তার কারণে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।