‘বেশিরভাগ দেশের’ ওপর শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত, তবে চীনের ওপর বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পরাস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করছেন। তবে চীনের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি চীনের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত করছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে লেখেন, 'বিশ্ববাজারের প্রতি চীন যে অসম্মান প্রদর্শন করেছে, তার কারণে আমি এতদ্বারা চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত করছি, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক ও ১০ শতাংশ শুল্ক স্থগিতের এই অনুমোদন দেওয়ার পর ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলোতে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
বিশ্ববাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা গেলেও চীন-বহির্ভূত বাণিজ্য অংশীদারদের ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো অস্পষ্ট।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের ওপর তথাকথিত পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপের ঘোষণা দেন। এর আওতায় বাংলাদেশের ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের এ শুল্কনীতির আওতায় চীনের পণ্যের ওপর শুল্কহার ১০৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ, জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে ট্রাম্প ডজনখানেক দেশের পণ্যের ওপর পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করেন। এর আওতায় চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১০৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসায় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপরই চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটি বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে। এর আগে মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল বেইজিং।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে কোনো দেশের দেওয়া সর্বশেষ পাল্টা জবাব ছিল চীনের এ শুল্ক আরোপ। তবে এখন ট্রাম্প নিজেই তিন মাসের জন্য শুল্ক 'লড়াই'য়ে বিরতি টানলেন বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১৯৫০-এর দশকে সূচক চালুর পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে।
এ অস্থিরতায় মার্কিন ট্রেজারি বন্ডেও বড় ক্ষতি হয়। বিনিয়োগকারীদেরকে এমনকি তাদের নিরাপদ সম্পদও বিক্রি করে ফেলতে দেখা যায়। অন্য বড় মুদ্রাগুলোর তুলনায় ডলারও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বাজারের এমন বিপর্যয়কে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না ট্রাম্প। বরং তিনি শুল্ক আদৌ স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি করেন। তিনি কখনো এ পারস্পরিক শুল্ককে 'স্থায়ী' বলেছেন, আবার দাবি করেছেন—এ শুল্ক বৈশ্বিক নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভোটার, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে, এসব শুল্কহার আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তনযোগ্য। তবে প্রশাসন এও স্বীকার করেছে, এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তবে বুধবার চীন ছাড়া বেশিরভাগ দেশের জন্য ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক আগের ০.৭ শতাংশ ক্ষতি কাটিয়ে ৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ২ হাজার পয়েন্ট বা ৫ শতাংশ বেড়েছে এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধির পর পিবডির শেয়ার আরও ৩.৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে বছরের হিসাবে এটি এখনো প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাসে রয়েছে।