বন্ধ হওয়া কিছু বিদেশি সহায়তা প্রোগ্রাম পুনরায় চালু করছে ট্রাম্প প্রশাসন

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য সাম্প্রতিক বাতিলকৃত অন্তত ছয়টি মার্কিন বিদেশি সাহায্য কর্মসূচি পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ দ্রুত সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ট্রাম্পের বিদেশি সাহায্য কাটছাঁটের তীব্রতাকে তুলে ধরেছে। এর ফলে প্রোগ্রামগুলো একবার বাতিল হচ্ছে তারপর পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং আবার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-এর কর্মকর্তা উপ-প্রশাসক জেরেমি লুইন স্টাফদের একটি অভ্যন্তরীণ ইমেইলে সম্প্রতি বাতিল হওয়া কর্মসূচিগুলো পুনরায় চালুর জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি লেবানন, সিরিয়া, সোমালিয়া, জর্ডান, ইরাক এবং ইকুয়েডরের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিগুলো পুনরায় চালু করতে বলেছেন। রয়টার্সকে এ বিষয়ক পাঁচটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রশাসন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্যাসিফিক অঞ্চলেরও চারটি কর্মসূচি পুনরায় চালু করেছে।
মঙ্গলবার লুইন একটি অভ্যন্তরীণ ইমেইলে বলেছেন, "কর্মসূচির এসব ওঠানামার জন্য দুঃখিত। এসবের অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছে এবং আমাদের এই প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থগুলো সঠিকভাবে সমন্বয় করার জন্য আরও ভালো কাজ করতে হবে। এই দোষ আমার ও আমি এর জন্য দায়বদ্ধ থাকবো।"
রয়টার্স সোমবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া এবং সিরিয়াসহ ১২টিরও বেশি দেশের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রোগ্রাম বন্ধ করেছে। এসব সহায়তার মোট পরিমাণ ছিল ১.৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের একটি এডভোকেসি গ্রুপ 'স্ট্যান্ড আপ ফর এইড'-এর মতে, লুইনের নির্দেশে গত সপ্তাহের শেষে লেবানন, সিরিয়া, সোমালিয়া এবং জর্ডানের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) চুক্তি বাতিল করা হয়। এর মোট পরিমাণ ৪৬৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
অনেক বাতিল হওয়া প্রোগ্রাম পরর্বতীতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর হস্তক্ষেপে আবারও চালু হয়েছিল ও কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। তবে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তবে এগুলো চূড়ান্ত নয়।
এসব প্রোগাম পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে পররাষ্ট্র দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
একটি 'মৃত্যুদণ্ড'
জানা গেছে, কিছু সহায়তা পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ এবং কংগ্রেসের চাপের ফলস্বরূপ নেওয়া হয়েছে।
ডাব্লিউএফপি সোমবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ১৪টি দেশে জরুরি খাদ্য সহায়তার তহবিল বন্ধ করছে এবং সতর্ক করে বলেছে, যদি এটি কার্যকর হয়, তাহলে এটি চরম খাদ্য সংকটে থাকা এবং ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করা বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য সহায়তা বন্ধ করে দিবে। যা তাদের জন্য 'মৃত্যুদণ্ডের' সামিল।
তালেবান শাসিত আফগানিস্তান এবং ইরান-সমর্থিত হুতি আন্দোলনের ইসলামিক বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়েমেনের সহায়তা পুনরুদ্ধার করেনি যুক্তরাষ্ট্র। উভয় দেশেই সবচেয়ে বড় সাহায্য প্রদানকারী ছিল ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ছিল যে, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে ডাব্লিউএফপি-এর তহবিল হুতি এবং তালেবানদের উপকারে আসছে।
ব্রুকস আরও বলেন, "অন্যান্য দেশগুলোতে চলমান কিছু কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে যেগুলো আসলে ইচ্ছা করে বাতিল করা হয়নি। সেগুলোই পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। প্রশাসন বিদেশি সাহায্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সপ্তাহান্তে যেসব সহায়তায় কাটছাঁট করা হয়েছে তার মধ্যে সোমালিয়ার জন্য ডাব্লিউএফপি-এর ১৬৯.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা ছিল। এটি দিয়ে দেশটির অপুষ্টে ভোগা শিশুর জন্য পুষ্টি এবং মানবিক বিমান সহায়তার জন্য দেওয়া হয়েছিল। সিরিয়ায় ডাব্লিউএফপি-এর ১১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্য সহায়তা বাতিল করা হয়েছে।
এসব কর্মযজ্ঞ ইউএসএআইডির-এর কার্যক্রম বন্ধ করার শেষ পদক্ষেপ ছিল।
এ বছর ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা বাতিল করেছে। অনেক মার্কিন কর্মকর্তারা একে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারক ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির ডেমোক্র্যাটরা রুবিওকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে তারা পররাষ্ট্র দপ্তর পুনর্গঠন পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে ইউএসএআইডিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও রয়েছে। তারা সংস্থাটির কার্যক্রম বাতিলকে 'অবৈধ, অযৌক্তিক, অন্যায়, ক্ষতিকর এবং অকার্যকর' বলে উল্লেখ করেছে।