যুক্তরাষ্ট্রে টিকা কমিটির সবাইকে বরখাস্ত করলেন রবার্ট এফ কেনেডি
যুক্তরাষ্ট্রে টিকা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী শীর্ষ কমিটি- অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসেস (এসিআইপি)-এর সব সদস্যকে বরখাস্ত করেছেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। টিকা নিয়ে সংশয়বাদী হিসেবে পরিচিত কেনেডি সোমবার (৯ জুন) এ ঘোষণা দেন। খবর বিবিসি'র।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি সম্পাদকীয়তে কেনেডি বলেন, এসিআইপির সদস্যদের 'স্বার্থের দ্বন্দ্ব' টিকার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। তিনি দাবি করেন, অধিকাংশ সদস্য ওষুধ কোম্পানি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পেয়েছেন। তিনি বলেন, 'এসিআইপির বেশিরভাগ সদস্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থ পেয়েছে, যাদের মধ্যে টিকা বিপণনকারী কোম্পানিও রয়েছে।'
এসিআইপির ১৭ সদস্যের মধ্যে আটজন বাইডেন প্রশাসনের সময় চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন । অধিকাংশ সদস্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কেনেডি বলেন, 'এই কমিটি না ভাঙলে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৮ পর্যন্ত নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারত না। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত এবং যেকোনো টিকার অনুমোদনে কেবল নামমাত্র সিলমোহরের মতো কাজ করছে।'
টিকা নিয়ে কেনেডির দীর্ঘদিনের সংশয়বাদিতা নিয়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। যদিও তিনি বলেছেন, 'আমি টিকা সরিয়ে নিচ্ছি না।' কেনেডি বলেন, তিনি আমেরিকানদের জন্য 'সবচেয়ে নিরাপদ' টিকা নিশ্চিত করতে চান।
যখন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কোনো টিকা অনুমোদন দেয়, তখন তারা টিকার উপকারিতা ও ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে। এরপর অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসেস (এসিআইপি) সিদ্ধান্ত নেয়, কোন গ্রুপকে কখন টিকা দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে টিকার খরচ বীমা কোম্পানি দেবে কি না।
নর্থ ক্যারোলিনার ইউনিভার্সিটি অব গিলিংস স্কুল অফ গ্লোবাল পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক নোয়েল ব্রুয়ার, যিনি এক বছর এসিআইপিতে ছিলেন, কেনেডির এই সিদ্ধান্তকে 'স্বাভাবিক নিয়ম ভঙ্গ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, 'আমি অবাক হয়েছিলাম, তবে এটি অপ্রত্যাশিত নয়। এটি গভীরভাবে হতাশাজনক এবং কিছুটা কষ্টকরও ছিল।'
সোমবার ক্যাসিডি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, 'এখন শঙ্কা হচ্ছে এসিআইপি এমন লোকে পূর্ণ হবে, যারা টিকা বিষয়ে জ্ঞানহীন এবং শুধুই সন্দেহপ্রকাশ করবে। আমি স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি এবং নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাবো যেন এমন না হয়।'
শিশু চিকিৎসক ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ পল অফিট কেনেডির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এসিআইপির সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, 'কেনেডি মনে করেন যারা টিকার পক্ষে কথা বলেন, তারা ওষুধশিল্পের পক্ষের। তিনি এমন একটি কাল্পনিক সমস্যার সমাধান করতে যাচ্ছেন।'
কেনেডি তার সম্পাদকীয়তে ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখনও আছে। তিনি লিখেছেন, 'এসিআইপির বেশিরভাগ সদস্যই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পেয়েছেন, যার মধ্যে টিকা বিপণনকারী কোম্পানিও রয়েছে।'
এসিআইপি সদস্যদের অবশ্যই স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকাশ করতে হয় এবং যেখানে দ্বন্দ্ব থাকে, সেসব বিষয়ে ভোট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়। নোয়েল ব্রুয়ার বলেন, 'এসিআইপি সরকারের যেকোনো কমিটির মধ্যে সর্বাধিক কঠোর স্বার্থের দ্বন্দ্ব নীতি অনুসরণ করে।'
পল অফিট জানিয়েছেন, সদস্যদের টিকা বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান ছিল এবং তারা গবেষণা তথ্য নিয়ে গভীর আলোচনা করেই জনগণের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নিতেন।
কেনেডি সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছেন, 'সমস্যা সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত' হওয়া নয়, বরং তারা একটি শিল্প-সমর্থিত পদ্ধতির অংশ, যা শুধু শিল্পের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়।'
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনেডি নতুন সদস্য নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলেননি। আগামী ২৫ জুন এসিআইপির সভা রয়েছে, যেখানে কোভিড, ফ্লু, মেনিনজাইটিস, আরএসভিসহ বিভিন্ন রোগের টিকার সুপারিশ নিয়ে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
