যে কারণে মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে আঘাত হানল শক্তিশালী ভূমিকম্প

মিয়ানমারে শুক্রবার (২৮ মার্চ) আঘাত হানা ৭.৭ ও ৬.৪ মাত্রার দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন থাইল্যান্ডসহ আশপাশের অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে এবং বেশ কিছু স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে শুরু করে প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভূ-পৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে। প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানার ১২ মিনিট পরেই দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
মিয়ানমার কতটা ভূমিকম্পপ্রবণ?
মিয়ানমার দুটি টেকটোনিক প্লেটের সীমান্তে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। তবে সাগাইং অঞ্চলে বড় ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বিরল।
লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ জোয়ানা ফর ওয়াকার বলেন, 'ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সীমান্ত দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত।'

তিনি আরও বলেন, এই প্লেটগুলো পরস্পরের পাশ দিয়ে ভিন্ন গতিতে সরছে। এতে 'স্ট্রাইক-স্লিপ' ধরনের ভূমিকম্প হয়, যা সাধারণত সুমাত্রার মতো 'সাবডাকশন জোনে' সৃষ্ট ভূমিকম্পের তুলনায় কম শক্তিশালী। তবে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
কেন শুক্রবারের ভূমিকম্প এত বিধ্বংসী ছিল?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগাইং অঞ্চলে একাধিক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে ৬.৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে অন্তত ২৬ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছিল।
তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আরেক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বিল ম্যাকগুয়ার বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প ছিল 'সম্ভবত গত ৭৫ বছরে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা সবচেয়ে বড়' ভূমিকম্প।
ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের সম্মানসূচক রিসার্চ ফেলো রজার মুসন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ভূমিকম্পটির গভীরতা কম হওয়ায় এর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।

মুসন বলেন, 'এটি অত্যন্ত বিধ্বংসী, কারণ ভূমিকম্পটি অগভীর স্তরে ঘটেছে। ফলে ভূকম্পনের কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে আসার পথে কম্পন তরঙ্গের শক্তি খুব একটা হ্রাস পায়নি। ভবনগুলো সরাসরি প্রবল কম্পনের ধাক্কা সহ্য করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'শুধু উপকেন্দ্রের ওপর গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়, কারণ ভূকম্পন তরঙ্গ উপকেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ে না– এগুলো পুরো ফল্ট (ফাটল রেখা) জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।'
মিয়ানমার কতটা প্রস্তুত ছিল?
ইউএসজিএস শুক্রবার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১ লাখের মধ্যে হতে পারে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব মিয়ানমারের জিডিপির ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
মুসন বলেন, এমন পূর্বাভাসগুলো পূর্ববর্তী ভূমিকম্পের তথ্য এবং মিয়ানমারের আকার, অবস্থান ও সামগ্রিক ভূমিকম্প প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা।
সাগাইং অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বিরল হওয়ায় [জনবহুল মান্দালে শহরের কাছাকাছি] সেখানে এখনো এমন অবকাঠামো নির্মিত হয়নি, যা এই ধরনের ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।
মুসন আরও বলেন, এই অঞ্চলে শেষ বড় ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৫৬ সালে এবং সেখানে নির্মিত বাড়িগুলো শুক্রবারে আঘাত হানা এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার জন্য তৈরি করা হয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, 'মিয়ানমারের অধিকাংশ ভূমিকম্প পশ্চিম দিকে ঘটে। তবে এই ভূমিকম্পটি দেশটির কেন্দ্র দিয়ে চলে গেছে।'