প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথমবারের মতো এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে দেশটি।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
'এটিই [মিয়ানমারের পক্ষ থেকে] নিশ্চিত করা প্রথম কোনো তালিকা, যা রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথে একটি বড় পদক্ষেপ,' বলা হয় বিবৃতিতে।
শুক্রবার ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন।
২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এ মূল তালিকাটি মিয়ানমারের কাছে সরবরাহ করেছিল।
এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাইকরণের জন্য তাদের ছবি ও নাম এখনো যাচাই-বাছাই বাকি রয়েছে।
'মূল তালিকায় থাকা বাকি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাইকরণ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার,' বিবৃতিতে বলা হয়।
বৈঠকে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গটি একাধিক দফায় উত্থাপন করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গত ১২ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গারা যেন মর্যাদার সঙ্গে এবং স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
'রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ একটা বড় সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। আমাদের সেখানে মূল ফোকাস থাকবে রোহিঙ্গারা যেন মর্যাদার সাথে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে এবং রাখাইনের সকল জনগোষ্ঠী যেন সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন। এর জন্য যত ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর প্রয়োজন, আমরা তার সবই করছি,' তিনি বলেন।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
রমজানের মাসের ওই সফরের সময় ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বসে একত্রে ইফতার করেন।
ওই অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন সেজন্য জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৫ মার্চ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তন এবং তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এরপর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ও কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা একটি ভিডিও ক্লিপ প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়।
ভিডিওর ক্যাপশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'সবাইকে ঈদ মোবারক। এই নিরাপদ ও আনন্দময় ঈদে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে ১২ লাখেরও বেশি অতিথি দুঃখে দিন কাটাচ্ছে।'
'আমি দোয়া করি, তারা যেন পরবর্তী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারেন,' তিনি আরও বলেন।
বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারে সহিংস নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।