দ্য বশিরি মিস্ট্রি: ২,৩০০ বছরের পুরোনো মমি খুলে দেখার সাহস করেনি কেউ

প্রায় এক শতাব্দী আগে প্রাচীন শহর লুক্সরের কিংস অঞ্চলের একটি উপত্যকায় খোঁজ মেলে 'অস্পৃশ্য বা আনটাচ্যাবল' হিসেবে পরিচিত একটি মমির। বিখ্যাত মিশর বিষয়ক গবেষক হাওয়ার্ড কার্টার ১৯১৯ সালে এর খোঁজ পান। তার তিন বছর পরই তিনি সেখান থেকে তুতেন খামের সমাধিরও খোঁজ পান।
এই শতাব্দী প্রাচীন মমিটির দেহ যে প্রক্রিয়ায় কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছে এমন প্রক্রিয়া কাপড় বাঁধা ও কাপড়েরর ধরণ আগে খোঁজ পাওয়া কোনো মমির দেহে পাওয়া যায়নি। এর দেহ সুগন্ধি কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছে। এছাড়া মমিটির মুখের আবরণে মিশরের স্থাপত্যশৈলীর আদলে নকশা পাওয়া গেছে।
এছাড়া মমিটি তৈরির প্রক্রিয়াকরণ এতো নির্ভুল ও সূক্ষ্ম ছিল যে এতে বোঝা যায় এই ব্যক্তি প্রাচীন মিশরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ ব্যক্তিত্ব ছিল। কিন্তু মমিটির পরিচয় জানা যায়নি। কারণ মমিটির পরিচয় নির্ণয় করতে হলে এর সুক্ষ্মভাবে বাঁধা কাপড় খুলতে হবে এবং এতে এর সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে এর পরিচয় জানার জন্য গবেষকরা অন্য প্রক্রিয়া ব্যবহার করছেন।
সিটিস্ক্যান ও এক্সরে করে মমিটিকে স্পর্শ না করেই গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন, মমিটি 'বশিরি' গোষ্ঠীর প্রায় ১৬৭ সেন্টিমিটার লম্বা কোনো এক মানুষের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমিটি দ্বিতীয় খ্রিষ্টপূর্ব থেকে তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়― টলেমাইক যুগের।
এসময় মমিকরণ শিল্প তুঙ্গে ছিল। মমিটি টলেমাইক যুগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এটি বর্তমানে কায়রোর মিশরীয় জাদুঘরে রাখা আছে।
মমিটির মুখের কাপড়ের আবরণ ও চিত্রগুলো মিশরের পিরামিডের স্থাপত্য নকশার সঙ্গে মিলে যায়। এটি ইঙ্গিত করে, এই ব্যক্তি সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত এবং উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
তবে গবেষকরা কেন মমিটি উন্মোচন করতে পারছে না?
মমিটির দেহে প্যাঁচানো কাপড় খোলা গেলে এর পরিচয় সবচেয়ে ভালোভাবে জানা যাবে। কিন্তু এই কাপড়গুলো অত্যন্ত নরম এবং ভঙ্গুর। আর এগুলোর ক্ষতি হলে এর নিখুঁত মমিফিকেশন প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে যাবে এবং যা আর পুনরায় ঠিক করা যাবে না।
তাই এটি যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য বিশেষজ্ঞরা সিটি স্ক্যান ও এক্সরে-এর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
গবেষকরা বলেন, মমিটির সজ্জিত দেহ ব্যক্তি জীবনে তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দেয়। বিশেষ করে, মমিটির বুকের উপর থাকা চেস্টলকটি অনেকগুলো সারিবদ্ধ পুতি দিয়ে তৈরি এবং এতে একটি বাজপাখির মাথার মতো কাঁটাও রয়েছে। মূলত এটি এই ব্যক্তির অনেক ধন-সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল তার চিহ্ন বহন করে।
এছাড়া মমিটির দেহ যা দিয়ে ঢাকা ছিল তাতে বিছানায় শুয়ে থাকা এক ব্যক্তির পাশে দেবী ইসিস ও নেফথিস দাঁড়িয়ে আছেন এমন দৃশ্য আঁকা রয়েছে।
মমিটির পায়ের আবরণেও কবরের দেবতা অনুবিসের দুটি চিত্র রয়েছে। এই বিস্তারিত তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে এই ব্যক্তি অত্যন্ত ধনী এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তবে কোথাও মমিকৃত ব্যক্তির নাম উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
এই ব্যক্তির পরিচয়ের একমাত্র বর্তমান চিহ্ন হল তার সমাধির মধ্যে লেখা একটি শিলালিপি। শিলালিপিটি সম্ভবত 'বশিরি' বা 'নেনো' গোষ্ঠীর হতে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি কোন নামটি সঠিক।
বিশেষজ্ঞরা এখনও মমিটির কোনো ক্ষতি না করে অবশিষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলো চালাচ্ছেন। তারা চেষ্টা করছেন মমিটির পরিচয় বরে করার।
ততদিন পর্যন্ত, বশিরির মমি একটি রহস্যের আবরণেই আবৃত থাকবে।
অনুবাদ: সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ