গাজায় স্থল হামলা বাড়ানোর পর ভূমি দখলের হুমকি ইসরায়েলের

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চতুর্থ দিনের মতো চলছে। ইসরায়েলি স্থলবাহিনী উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় হামলা আরও জোরদার করেছে। এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উপকূলীয় এই উপত্যকার ভূমি দখলের হুমকি দিচ্ছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শুক্রবার বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও 'তীব্র' হবে। তিনি বলেন, 'সকল সামরিক ও বেসামরিক চাপ প্রয়োগ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে জনগণকে সরিয়ে নেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট [ডোনাল্ড] ট্রাম্পের প্রস্তাবিত স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন'।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কাটজ সেনাবাহিনীকে 'গাজার অতিরিক্ত এলাকা দখল, জনসংখ্যা সরিয়ে নেওয়া এবং ইসরায়েলি সম্প্রদায় ও সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাজার চারপাশে নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণ' করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেছেন, হামাস গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল ভূমি দখল অব্যাহত রাখবে।
দ্য জেরুজালেম পোস্ট কাটজকে উদ্ধৃত করে জানায়, 'হামাস যত বেশি সময় নেবে, তত বেশি এলাকা হারাবে, যা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে ইসরায়েল স্থায়ী নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজার আরও বেশি এলাকা দখল করবে।'
এদিকে, ইসরায়েলি স্থলবাহিনী যখন গাজার ভেতরে প্রবেশ করছে, তখন যুদ্ধবিমান থেকে গাজাজুড়ে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চলছে। গাজার উত্তর অংশের তুফাহ জেলায় এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন শিশু-সহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে এক বাড়িতে ট্যাঙ্কের গোলায় এক নারী ও তার মেয়ে নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
পরে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, দক্ষিণ ইসরায়েলের আশকেলন শহরে তারা উত্তর গাজা থেকে ছোড়া দুটি গোলা প্রতিহত করেছে। তবে কোনও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করেনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি সেনারা মিশরীয় সীমান্তের কাছে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের শাবৌরা এলাকা এবং উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় হামলা চালায়। ইসরায়েল জানায়, তাদের সম্প্রসারিত স্থল অভিযানের অংশ হিসেবে তারা এই অঞ্চলের প্রধান উত্তর-দক্ষিণ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে।
মধ্য গাজা থেকে আল জাজিরার হিন্দ খোদারি জানান, বেইত লাহিয়া ও রাফাহের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী হামলার আগে কোনও সতর্কবার্তা দেয়নি।
তিনি বলেন, 'তারা লিফলেট ছুড়েনি বা লোকজনকে এলাকা ছাড়তে কোনও সতর্কবার্তা দেয়নি।'
গত মঙ্গলবার প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। এর আগে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আরও কঠোর অবরোধ আরোপ করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে এ হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ শিশুসহ ৫৯০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
হামাস যুদ্ধবিরতির নতুন চুক্তিতে রাজি না হওয়ায় ইসরায়েল হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে দেশটি দাবি করেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি গাজায় অবশিষ্ট ৫৯ বন্দির বেশিরভাগের মুক্তি চেয়েছিল। তবে তারা চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলছে, এটি জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত মূল চুক্তিতে অটল থাকতে চায়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে, ইসরায়েলের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরায়েলের হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, 'গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য হামাস পুরোপুরি দায়ী। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র যে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিল, হামাস তা গ্রহণ করলে একটি মৃত্যুও ঘটত না।'