পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ট্রাম্পের বড় পরীক্ষা আজ

আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। আলোচনার মূল লক্ষ্য হবে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়ী সমাধানে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে পুতিনকে রাজি করানো।
গুরুত্বপূর্ণ এই ফোনালাপ ট্রাম্পের আলোচিত সমঝোতা দক্ষতা এবং রুশ নেতার সঙ্গে তার সুসম্পর্কের একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা পশ্চিমা মিত্রদের উদ্বিগ্ন করেছে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, 'চূড়ান্ত চুক্তির অনেক বিষয় নিয়ে একমত হওয়া গেছে। তবে এখনও অনেক কিছু বাকি। প্রতি সপ্তাহে উভয় পক্ষ মিলিয়ে ২ হাজার ৫০০ সেনার মৃত্যু হচ্ছে। এটি এখনই বন্ধ করতে হবে। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।'
ট্রাম্প পূর্বে ইউক্রেনকে রাশিয়ার তুলনায় কঠিন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে ইউক্রেন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে।
সোমবার ফক্স নিউজ রেডিওর 'দ্য গাই বেনসন শো'-তে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'গত সপ্তাহে আমরা ইউক্রেনের কাছ থেকে ভালো প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'তারা গোলাগুলি বন্ধ করতে এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সম্মত হয়েছে, যাতে আমরা স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করতে পারি। এখন আমাদের রাশিয়ার কাছ থেকেও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর আগামীকাল আমরা আরও জানতে পারব। আশা করছি, আমরা ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারব।'
ট্রাম্প সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে কিয়েভের কিছু ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া এবং একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরাবরই বলেছেন যে তার দেশের সার্বভৌমত্ব আলোচনার বিষয় নয় এবং রাশিয়াকে দখলকৃত ভূখণ্ড ফেরত দিতে হবে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে দেশটির চারটি পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
পুতিন দাবি করেছেন যে ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান বিস্তার রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। তিনি চান ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ অর্জনের প্রচেষ্টা বাদ দিক।
পুতিন আরও বলেছেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড ধরে রাখতে হবে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করতে হবে এবং কিয়েভকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। বর্তমানে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামরিক আইন জারি রেখে দেশ পরিচালনা করছেন।
পুতিন: একজন শক্ত সমঝোতাকারী
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। তবে পুতিনের মতো কঠোর সমঝোতাকারীর সঙ্গে আলোচনা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। জেলেনস্কি বরাবরই বলেছেন যে পুতিন চুক্তি মেনে চলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক 'সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ'-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক মারিয়া স্নেগোভায়া বলেন, 'এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যে পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে পারেন, সামান্য কিছু বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও বেশি ছাড় আদায়ের চেষ্টা করবেন। পুতিন ট্রাম্পকে কোনো ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির নামে প্রতারণা করলে সেটি খুবই খারাপ পরিস্থিতি হবে।'
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। উল্টো তিনি মিত্র দেশে শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার মতো বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে অস্বস্তিতে ফেলেছেন।
ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে একধরনের 'বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক' বজায় রাখলেও যুদ্ধ বন্ধ করতে তার প্রশাসন সম্প্রতি মস্কোর ওপর চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে।
গত মাসে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠক হয়। ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মনে করেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি।
জেলেনস্কি পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ এনে বলেন, মঙ্গলবার যখন পুতিন ট্রাম্পের সাথে কথা বলবেন, তখন তিনি এক সপ্তাহের জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত থাকবেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মঙ্গলবার সকালে পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন ও মস্কোর সময়ের পার্থক্য বিবেচনায় রাখলেও এখনো নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করেনি।