পাকিস্তানে ট্রেনে হামলা: ৩০০ জিম্মি উদ্ধার, সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৩৩ সদস্য নিহত

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে থাকা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে তারা ৩০০-র বেশি জিম্মিকে মুক্ত করেছে। খবর বিবিসি'র।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, অভিযানের সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৩৩ জন নিহত হয়েছে।
অভিযান শুরুর আগে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ২১ জন বেসামরিক জিম্মি ও চারজন সামরিক সদস্যকে হত্যা করেছে বলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে বিবিসি এ সংখ্যাগুলো যাচাই করতে পারেনি।
অঞ্চলটিতে অবশিষ্ট যে কোনও হুমকি দূর করতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি অভিযান এখনও চলছে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, হামলার সময় ট্রেনটিতে প্রায় ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীর কিছু সদস্য ট্রেন ছেড়ে আশপাশের পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে যায় এবং তাদের সঙ্গে অজানা সংখ্যক যাত্রীকেও নিয়ে যায়।
হামলার সময় পালিয়ে যাওয়া যাত্রীদের সন্ধানে সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র। তবে কতজন যাত্রী এখনও নিখোঁজ আছেন, সেটি নিশ্চিত করা যায়নি।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বিএলএ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিএলএ বেলুচিস্তান প্রদেশের জন্য বড় ধরনের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার দাবি জানানো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি।
তারা ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সরকার বেলুচিস্তানের সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদ শোষণ করছে এবং অঞ্চলটির উন্নয়নে অবহেলা দেখয়েছে। অতীতে তারা সেনা ক্যাম্প, রেলস্টেশন এবং ট্রেনে হামলা চালালেও; প্রথমবারের মতো তারা কোনো ট্রেন ছিনতাই করেছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনটিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেলুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দিলে জিম্মিদের হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
হামলার সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ট্রেনের ট্র্যাকের একটি অংশে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পাহাড়ি সুড়ঙ্গের কাছে ট্রেনটির ওপর গুলি চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ট্রেনের ভেতরে 'বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা'-র বর্ণনা দিয়েছেন। যাত্রী ইশাক নূর বিবিসিকে বলেন, 'আমরা পুরো সময় নিশ্বাস চেপে রেখেছিলাম, জানতাম না এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে।'
হামলার সময় কর্মকর্তারা যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অসুবিধায় পড়েছিলেন, কারণ ওই দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট বা মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যারা ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হয়েছিলেন, তারা প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে কাছের রেলস্টেশনে পৌঁছান।
তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুহাম্মদ আশরাফ। তিনি কোয়েটা থেকে লাহোরে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, 'আমরা অনেক কষ্টে স্টেশনে পৌঁছেছি, কারণ আমরা ক্লান্ত ছিলাম এবং আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুরাও ছিল।'
জিম্মিদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার ও শত শত সেনা মোতায়েন করা হয়। বুধবার সকাল নাগাদ ১০০-র বেশি যাত্রীকে মুক্ত করা হয়।
ট্রেন ছিনতাইয়ের এই ঘটনাটি ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। পুরো হামলা ও উদ্ধার অভিযানের তথ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলায় জড়িত যে কাউকে বিচারের আওতায় আনা হবে।