রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ‘এখনও অনেক, অনেক দূরে’: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার কোনো চুক্তি 'এখনও অনেক, অনেক দূরে'। তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব এতটাই দৃঢ় যে, সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
তিন বছরের যুদ্ধকালীন সময়ে ওয়াশিংটনের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি রোববার রাতে বলেছেন, 'আমি মনে করি, আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, কারণ এটি সাময়িক সম্পর্ক নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারত্ব যথেষ্ট শক্তিশালী, এই অংশীদারত্বের ভিত্তিতেই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।'
ইউক্রেনীয় নেতা লন্ডনে এসেছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উদ্যোগে ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থন জোরদার করার প্রচেষ্টায় অংশ নিতে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের স্পষ্ট সমর্থনের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের জন্য ইউরোপের সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং তা সম্ভবত আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এক সাংবাদিক ইউরোপীয় দেশগুলোর নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে জেলেনস্কির মন্তব্য চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আজ প্রথম পদক্ষেপগুলো নিয়ে কথা বলছি, তাই এগুলো কাগজে আসার আগে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।'
তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধ শেষ করার কোনো চুক্তি এখনও অনেক, অনেক দূরে এবং কেউ এখনও এই সমস্ত পদক্ষেপ শুরু করেনি। ভবিষ্যতে আমরা যে শান্তি প্রত্যাশা করি, তা হতে হবে ন্যায়সংগত, সৎ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী।'
এরপর সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কির ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন, যেখানে জেলেনস্কি বলেন যে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ হওয়া এখনও বহু দূরের বিষয়। ট্রাম্প তার 'ট্রুথ সোশ্যাল' প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, 'জেলেনস্কির দেওয়া এটি সবচেয়ে খারাপ বক্তব্য এবং আমেরিকা আর বেশি দিন এটি মেনে নেবে না!'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমি আগে থেকেই বলে আসছি, এই লোকটি শান্তি চায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকার সমর্থন তার পাশে রয়েছে। ইউরোপও, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া তারা এই কাজ চালিয়ে যেতে পারবে না—এটি সম্ভবত রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের দিক থেকে খুব একটা ভালো বক্তব্য ছিল না। তারা আসলে কী ভাবছে?'
হোয়াইট হাউজ চায় জেলেনস্কি সম্ভাব্য সমঝোতার ব্যাপারে আরও খোলামেলা মনোভাব দেখাক, যাতে সংঘাতের অবসান ঘটে। তবে গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে হওয়া বৈঠকে জেলেনস্কি এই ধারণার বিরোধিতা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দাবি করেন।
জার্মানির সাম্প্রতিক নির্বাচনে সম্ভাব্য পরবর্তী নেতা ফ্রিডরিখ মের্জ সোমবার বলেন, তিনি মনে করেন না যে গত শুক্রবার ওভাল অফিসে ঘটে যাওয়া উত্তপ্ত আলোচনা আকস্মিক ছিল।
মের্জ বলেন, তিনি ওই ঘটনার দৃশ্য বারবার দেখে তার মূল্যায়ন করেছেন। 'আমার ধারণা, এটি জেলেনস্কির বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল না, বরং এটি ছিল পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা তৈরি করা।'
তিনি বলেন, 'দুই পক্ষের পারস্পরিক ভাষা দেখে আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওয়াশিংটন থেকে আমরা যে ধরনের আচরণ দেখছি, তার সঙ্গে এটির কিছুটা ধারাবাহিকতা রয়েছে।'
মের্জ আরও বলেন, 'আমি মনে করি, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আগামী বছর ও দশকগুলোতে আরও অনেক কিছু করতে প্রস্তুত থাকা উচিত।' তবে তিনি ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে মত দেন। 'আমেরিকাকে ইউরোপে ধরে রাখার জন্য আমাদের সব কিছু করা উচিত,' বলেন তিনি।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত আলোচনার পরও জেলেনস্কি প্রকাশ্যে আশাবাদী অবস্থান ধরে রেখেছেন। ওই আলোচনায় ট্রাম্প ও ভ্যান্স অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি 'অশ্রদ্ধাশীল' এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য তার আরও কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত। এ ধরনের পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে বিশাল রুশ বাহিনীর আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।