সিরিয়ার আলেপ্পোর অর্ধেক বিদ্রোহীদের দখলে, শহরের বিমানবন্দর ও সড়ক বন্ধ ঘোষণা

সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে বিদ্রোহীদের অগ্রগতির ফলে শহরের বিমানবন্দর এবং সব সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তিনটি সামরিক সূত্র।
ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সপ্তাহজুড়ে সরকারি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা শহরটির অর্ধেকেরও বেশি অংশের দখল নিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিদ্রোহীরা তাদের আক্রমণ শুরু করে এবং শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তারা জানায়, বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর বিভিন্ন এলাকায় অগ্রসর হচ্ছে।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার মিত্র রাশিয়া এবং ইরানের যৌথ অভিযান বিদ্রোহীদের আলেপ্পো থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর বিদ্রোহীরা আবারও শহরে প্রবেশ করেছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এবং সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিরোধের জন্য এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে রাশিয়া সিরিয়াকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সামরিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন অস্ত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিরিয়ায় পৌঁছাবে। এদিকে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এলাকাগুলো থেকে "নিরাপদ প্রত্যাহার" কার্যক্রম শুরু করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তিন দিনের সংঘাতে অন্তত ২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮ বছরের শিশুও রয়েছে। বিদ্রোহীদের গোলাবর্ষণে আলেপ্পোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
বিদ্রোহীদের এই অভিযান তুরস্কের সমর্থনে পরিচালিত হয়েছে বলে বিদ্রোহী সূত্র জানিয়েছে। তবে তুরস্ক এই সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এর ফলে অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, রাশিয়া বিদ্রোহীদের আক্রমণকে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, "আমরা চাই সিরীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক।"
জাতিসংঘের সিরিয়া সংকটের উপ-আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ডেভিড কারডেন বলেন, "উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।" সংঘাতের ফলে বেসামরিক মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।