৩ মাসে দুইবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টা; দখলকারীদের চেনে না প্রশাসন

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তবে গত মে মাস থেকে ১০তলা ভবনটি দুই দফা দখলের চেষ্টা হয়েছে। এখন একটি গ্রুপ ভবনটি পরিষ্কার ও সংস্কার করছে।
এসব দখলকারীর পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আবার যারা দখল করেছে, তারাও নিজেদের বিস্তারিত পরিচয় ও উদ্দেশ্য প্রকাশ করেনি।
বুধবার থেকে একটি গ্রুপ লাল কাপড়ে লেখা 'আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট' শীর্ষক একটি ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছে ভবনটিতে।
গতকাল (২৫ জুলাই) টিবিএসের একজন প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, প্রবেশপথে ব্যানারটি ঝুলছে। ভেতরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। ওয়াসার একটি দল নিচতলায় গত ১ বছর ধরে জমে থাকা নোংরা পানি সেচের কাজ করছে। ভবনের ভেতরে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন।
এর আগে গত ১৪ মে থেকে 'জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়' শীর্ষক একটি ব্যানার দীর্ঘদিন এই ভবনে টাঙানো ছিল। সে সময় ওই ব্যানারের দাবিদার কাউকে দেখা যায়নি। তবে একই নামে কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ব্যানার ঝোলানো হয়েছিল।
পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত মাতবর আলী নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, 'গত বুধবার থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে দেখতে পারবেন সবকিছু।'
নতুন কার্যালয়ের নাম কী, জানতে চাইলে সোহরাব আলী নামে একজন লাল ব্যানারটি দেখিয়ে বলেন, 'ওই যে লাল কাপড়ে লেখা আছে, সেই অফিসটি হবে।'
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উল্টো পাশে রমনা মার্কেটের পাশে ঠেলা গাড়িতে দেশি ফলমূল বিক্রি করেন রিপন মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'গত এক বছরে এখানে মানুষজন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এমন অবস্থা হয়েছে যে উৎকট গন্ধে আশপাশের দোকানদারদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই না, এটা ছিন্নমূল মানুষজনসহ রিকশাচালক, ভ্যান চালক, পথচারীদের শৌচাগারে পরিণত হয়েছিল। ভাসমান মানুষের নেশা-আড্ডা জমত এখানে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী টিবিএসকে বলেন, কোনো ধরনের সংস্কার বা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ অবগত নয়। 'সেখানে কোনো দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হলে আমরা তা করব, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি,' বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পরে গুলিস্তানে পরিত্যক্ত বিভিন্ন বাড়ি খালি পড়ে ছিল। এসব ভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় হয়। তারই একটি তখনকার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ঠিকানার এই পুরনো ভবন, যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ১৯৮১ সাল থেকে। আট কাঠার এই জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পুরোনো ভবন ভেঙে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০-তলা নতুন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়।