বিরল চীন সফরে ব্লিঙ্কেন-শি’র সাক্ষাৎ , ‘অগ্রগতি’ হয়েছে বললেন শি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার চীন সফরের শেষদিনে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আলোচনার বিষয়ে চীনের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, এতে 'অগ্রগতি' হয়েছে।
রোববার ব্লিঙ্কেনের দুদিনের চীন সফর শুরু হয়। আজ সোমবারই (১৯ জুন) যা শেষ হবে। নানান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যে পরস্পর-বিরোধী অবস্থান, মতপার্থক্য রয়েছে, তা যেন সরাসরি দুই পরাশক্তির সামরিক সংঘাতে রূপ না নেয়– সে লক্ষ্যে উত্তেজনা কমাতে এই সফর করছেন ব্লিঙ্কেন।
২০১৮ সালের পর তার পদমর্যাদার কোনো শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলেন।
গণচীনের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ভেন্যু- গ্রেট হল অব দ্য পিপল - এ ব্লিঙ্কেনকে স্বাগত জানান শি জিনপিং। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশি সরকার-প্রধানদের অভ্যর্থনা জানাতে এই ভেন্যু ব্যবহৃত হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদমর্যাদার ব্লিঙ্কেনের সাথে শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ চীনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কূটনৈতিক বার্তাই দিয়েছে।
উভয় দেশের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ কনফারেন্স টেবিলে একে-অপরের মুখোমুখি বসেন। আসনবিন্যাসে মধ্যমণি ছিলেন শি জিনপিং, তার ঠিক ডান পাশেই বসেন ব্লিঙ্কেন।
বৈঠক চলে প্রায় ৩০ মিনিট। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে শি জিনপিংয়ের শীর্ষ সম্মেলনের পথ তৈরি হতে পারে।
সর্বশেষ গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠক করেন বাইডেন ও শি। তাইওয়ান-সহ নানান ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলেও – বালির বৈঠকে উভয় নেতা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সেকথা স্মরণ করে ব্লিঙ্কেনের সাথে বৈঠকের আগে শি বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও আমি যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, তার ভিত্তিতে উভয় দেশ একটি অভিন্ন বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। এবিষয়ে উভয়পক্ষের প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে, এবং কিছু কিছু বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে। এটা খুবই ভালো খবর।"
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম শি'র বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে।
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের প্রসঙ্গে চীনের প্রত্যাশা তুলে ধরে শি আরও বলেন, "আমরা একটি দৃঢ় ও স্থিতিশীল যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক দেখব বলে আশা করি। আমাদের বিশ্বাস, উভয় দেশ বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে পারবে।"
একইসঙ্গে "চীনের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করতে" যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে রোববার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং এর সাথে বৈঠকে অংশ নেন ব্লিঙ্কেন। ওই বৈঠকের বিবৃতি বা শি জিনপিংয়ের বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট হয়নি যে, ঠিক কি ধরনের অগ্রগতি হয়েছে।
রোববার চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিশনের প্রধান ওয়াং ই-ও তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেনের সাথে। এসময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল খোলা রাখার ওপর গুরুত্ব দেন ব্লিঙ্কেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বৈঠককে 'ফলপ্রসূ' বলে উল্লেখ করে।
বৈঠকে ওয়াং ই দু'দেশের সম্পর্ক খুবই নিম্ন-অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ধারণাই এর মূল কারণ।
ওয়াং ব্লিঙ্কেনকে বলেন, "জনগণ, ইতিহাস ও বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের একটি দায়িত্বশীল আচরণ থাকা দরকার। এবং তার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ধারাবাহিক পতনকে ঠেকাতে হবে।"
দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে চীনের প্রতিবেশী অনেক দেশই উদ্বিগ্ন, যারা যুক্তরাষ্ট্রেরও মিত্র। দুই পরাশক্তির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের চ্যানেল না থাকায় – যেকোনো মুহূর্তে সংঘাত থেকে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া, উভয় দেশের সামরিক বাহিনী পর্যায়ে আলোচনায় রাজিও নয় চীন। এই বাস্তবতায়, উত্তেজনা কমাতে এবং যোগাযোগের নতুন পথ বের করতে ব্লিঙ্কেনের এই সফর।
কিন গ্যাং এর সাথে বৈঠককালে ব্লিঙ্কেন "ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি কমানোর" প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করতে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ঐক্যমত্য হয়েছে। এতে দুই দেশের নাগরিকরা সহজে একে-অন্যের দেশ ভ্রমণ করতে পারবে।
নানান ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান থাকলেও, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এসময় কিন গ্যাংকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। কিন গ্যাং ওয়াশিংটন সফরে যেতে সম্মতও হয়েছেন।