সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে 'সাঁজোয়া-বুলেটপ্রুফ' ট্রেনে করে চীন যাচ্ছেন কিম জং উন

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে সাঁজোয়া-বুলেটপ্রুফ ট্রেনে করে চীনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ট্রেনটি চীনের সীমান্তে প্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
আগামী বুধবার 'ভিক্টরি ডে' উপলক্ষে তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে আয়োজিত এই কুচকাওয়াজে কিমের পাশাপাশি থাকবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ আরও বহু রাষ্ট্রনেতা। এটিই হবে কিমের প্রথম বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বৈঠকে অংশগ্রহণ।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, কিম জং উনের ব্যবহৃত সাঁজোয়া বুলেটপ্রুফ ট্রেনকে চলন্ত 'দুর্গ' বলা হয়। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও ভারী সুরক্ষাব্যবস্থার কারণে ট্রেনটির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল)। ফলে পিয়ংইয়ং থেকে বেইজিং পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ২০ ঘণ্টা। তার বহনকারী বিশেষ ট্রেনের রেস্তোরাঁতে ফরাসি ওয়াইন ও লবস্টারের মতো বিলাসবহুল খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
১৯৫৯ সালের পর এই প্রথমবার কোনো উত্তর কোরিয়ান নেতা চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিচ্ছেন। কিমের সাথে যোগ দেবেন আরও ২৬ রাষ্ট্রপ্রধান—যার মধ্যে মিয়ানমার, ইরান ও কিউবার নেতারাও আছেন। এর আগে, ২০১৫ সালের ভিক্টরি ডে কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়া তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা পাঠায়নি, প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পার্টি কর্মকর্তা চোয়ে রিয়ং হে।
বিদেশ ভ্রমণে কিমের উপস্থিতি বিরল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার যোগাযোগ সীমিত থেকেছে মূলত পুতিনের সঙ্গে—রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে অন্তত দুইবার তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে কিম শেষবার বেইজিং সফর করেছিলেন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। সেবারও তিনি ট্রেনে করে গিয়েছিলেন।
কিমের এই ট্রেনযাত্রার ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল তার দাদা কিম ইল সুং-এর সময় থেকে। দাদা ভিয়েতনাম ও পূর্ব ইউরোপ সফরে ট্রেনে যেতেন। কিমের বাবা কিম জং ইলও বিমানে ভ্রমণে ভয় পেতেন বলে ট্রেনই ব্যবহার করতেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সাঁজোয়া ট্রেনটিতে প্রায় ৯০টি বগি রয়েছে, যেখানে কনফারেন্স রুম, দর্শনকক্ষ ও শয়নকক্ষ পর্যন্ত রয়েছে।
বুধবারের কুচকাওয়াজে তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে একসঙ্গে মার্চ করবেন কয়েক হাজার সেনা। এটি হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তি ও যুদ্ধের সমাপ্তি স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠান।
৭০ মিনিটব্যাপী কুচকাওয়াজে চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র প্রদর্শন করা হবে—যার মধ্যে থাকবে শত শত বিমান, ট্যাঙ্ক, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম। এটাই প্রথমবার চীনের নতুন সামরিক কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী।
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের বিরোধিতা করায় পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা মূলত অনুপস্থিত থাকবেন। তবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নেতারা উপস্থিত থাকবেন, যা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টারই ইঙ্গিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে শুধু স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো সরাসরি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরি প্রতিনিধি পাঠাবে।