শ্রীলঙ্কার সমুদ্রশসায় বিনিয়োগ করছে চীন

শ্রীলঙ্কার সমুদ্রশসা (সী কিউকাম্বার) খামারে চীন বিনিয়োগ শুরু করেছে। ব্যায়ামের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য এবং ক্লান্তি দূর করার জন্য সমুদ্রশসা বেশ উপকারী। শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় জাফনার পার্শ্ববর্তী আরিয়ালাই গ্রামে চীনের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গুই লান ইতোমধ্যেই সমুদ্রশসা উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম হ্যাচারি তৈরি করেছে। শ্রীলঙ্কার জলবায়ু সমুদ্রশসা উৎপাদনের উপযোগী হলেও যদি একসাথে প্রচুর উৎপাদন করা হয়, তবে স্থানীয় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জিও পলিটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই স্থানীয় কৃষক ও মাঝিরা সমুদ্রশসা উৎপাদনের বাজে প্রভাব লক্ষ্য করেছেন, অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। খারাপ প্রভাব পড়েছে উপকূলের মাটিতেও।

কেবল ২০২১ সালেই শ্রীলঙ্কা চীনে ৩৩৬ টন সমুদ্রশসা রপ্তানি করেছে, যা শ্রীলঙ্কাকে পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রশসা রপ্তানিকারকে। চীনের চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কার সরকার সমুদ্রশসার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছিল, তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ধ্বসের পর এই পরিমাণ আরও বাড়াতে চায় তারা। ফলে সমুদ্রশসা উৎপাদনের জন্য চীনের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
২০২২ সালের জুন মাসে, শ্রীলঙ্কার উত্তর ও পুর্ব উপকূলে থাকা জাফনা, মান্নার, কিলনোচ্চি এবং বাত্তিকালোয়া অঞ্চলের ৫ হাজার একর জুড়ে সমুদ্রশসা উৎপাদনের বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা। ফলে উপকূলের বিশাল অংশজুড়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষ চলাচলের ওপর দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় জেলেরা। শ্রীলঙ্কার মৎস্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অ্যাকুয়াকালচার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনেই জেলেদের এভাবে শোষণ করা হচ্ছে।

চীনের নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত নাইনাতিভু দ্বীপের ঠিক পাশেই পুঙ্গুদিতিভুও সমুদ্রশসা উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। এভাবে চীনারা তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর উপকূলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
কিন্তু কী কারণে চীন সমুদ্রশসা উৎপাদনে এত আগ্রহী? জিওপলিটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর একটি কারণ হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে সেরা অ্যাথলেট তৈরির উদ্দেশ্য। দীর্ঘদিন ধরেই চীন অলিম্পিকসহ অন্যান্য স্পোর্টস ইভেন্টে ভালো পারফর্ম করে আসছে, সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় তারা।
সাঁতার কাটার সময়সীমা বাড়াতে, দেহের ওপরের অংশের শক্তি বাড়াতে, পেশির ইঞ্জুরি ঠিক করতে এবং পেশির গ্লাইকজেন এবং এনার্জি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে সমুদ্রশসা। এছাড়াও চীনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাড়ের সন্ধিব্যথা সারাতেও ব্যবহৃত হয় এটি। আয়ু বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখার জন্যেও পরিচিত এটি।

তারামাছের সাথে একই একাইনোডার্মস গোত্রে থাকা ব্যারেল-আকৃতির হলোথুরোইডিয়া প্রজাতির একটি এই সমুদ্রশসা। গভীর বা অগভীর দুই অংশেই বেঁচে থাকে এটি।
কেবল চিকিৎসা বা সুস্বাস্থ্যের জন্যেই নয়, চীনা সমাজে একটি সুস্বাদু খাবার হিসেবেও পরিচিত সমুদ্রশসা। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা প্রচুর, যার প্রধান ভোক্তা চীন। সামুদ্রিক খাবার হিসেবে এর দামও তুলনামূলক বেশি।
চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমানা নেই তা পুরো বিশ্ব জানে, তবে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হওয়ার জন্য চীনের এই প্রতিযোগিতা শ্রীলঙ্কার মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মত দিয়েছে জিওপলিটিক।