ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা: 'ভালো বন্ধু' মোদির সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী ট্রাম্প

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক শীতল সম্পর্কে উষ্ণতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনায় একটি সফল সমাধানে পৌঁছানো দুই দেশের জন্য কঠিন হবে না বলে তিনি 'নিশ্চিত'। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তার 'খুব ভালো বন্ধু' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছেন।
ট্রাম্পের এই ইতিবাচক মন্তব্যের উষ্ণ জবাব দিয়েছেন মোদি। তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন যে চলমান আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের অংশীদারত্বের অপার সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের জন্য বাণিজ্য বাধা দূর করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমি আগামী সপ্তাহগুলোতে আমার খুব ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত যে আমাদের দুটি মহান দেশের জন্য একটি সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কোনো অসুবিধা হবে না।'
এর জবাবে 'এক্স' (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে মোদি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। তিনি আরও বলেন, উভয় দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাণিজ্য আলোচনা শেষ করার জন্য কাজ করছে।
মোদি বলেন, 'আমিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমরা আমাদের দুই দেশের জনগণের জন্য একটি উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করব।'
সাম্প্রতিক সময়ে এটি দ্বিতীয়বার যখন ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্কের প্রশংসা করলেন এবং মোদির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখালেন। মোদিও তার মন্তব্যের ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন।
শুল্ক এবং রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে উত্তেজনার কারণে দুই দেশের সম্পর্ক গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে ছিল। ট্রাম্পের এই মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এর আগে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছিলেন। রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কও আরোপ করা হয়।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে 'অন্যায়, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য' বলে বর্ণনা করেছিল।
কয়েক মাস ধরে ভারতের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক বক্তব্যের পর, গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি 'বিশেষ সম্পর্ক' রয়েছে এবং চিন্তার কিছু নেই, কারণ দুই দেশের মধ্যে 'মাঝে মাঝে কিছু মুহূর্ত আসে'।
ট্রাম্প শুক্রবার ওভাল অফিসে বলেছিলেন, 'আমি সবসময় মোদির বন্ধু থাকব, তিনি একজন মহান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অসাধারণ। আমি সবসময় বন্ধু থাকব, কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি যা করছেন তা আমার পছন্দ হচ্ছে না।'
হাসিমুখে ট্রাম্প আরও বলেন, 'কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে এমন মুহূর্ত আসে।'
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মোদি শনিবার বলেছিলেন যে তিনি ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের ইতিবাচক মূল্যায়নের গভীরভাবে প্রশংসা করেন।
মোদি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তার ইতিবাচক মূল্যায়নের আমি গভীরভাবে প্রশংসা করি এবং পুরোপুরি সমর্থন করি।'
তিনি আরও বলেন, 'ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অত্যন্ত ইতিবাচক ও দূরদর্শী কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে।'
এর আগে ট্রাম্প এও বলেছিলেন যে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এত বেশি তেল কিনবে, তাতে তিনি 'খুব হতাশ' হয়েছেন।
চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও রাশিয়াকে হারিয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, '...আমি খুব হতাশ হয়েছি যে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এত বেশি তেল কিনছে, এবং আমি তাদের তা জানিয়েছি। আমরা ভারতের ওপর ৫০ শতাংশের একটি বড় শুল্ক আরোপ করেছি, যা অনেক বেশি। মোদির সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক, তিনি অসাধারণ। তিনি কয়েক মাস আগে এখানে এসেছিলেন।'
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ভারত বলে আসছে যে, তাদের জ্বালানি কেনা জাতীয় স্বার্থ এবং বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, ভারত ছাড়ের মূল্যে রাশিয়ার তেল কেনা শুরু করে।