বাংলাদেশের পর এবার নেপালে যেভাবে 'জেন জি'রা অভ্যুত্থান ঘটাল

বাতাসে বারুদের গন্ধ, শহরের চত্বরগুলো তরুণ বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে ঠাসা, আর মাথার ওপর হেলিকপ্টারের একটানা গুঞ্জন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন দৃশ্য যেন বারবার ফিরে আসছে।
জনপ্রিয় আন্দোলনের ঢেউ বহু দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিচ্ছে, যা প্রায়শই শেষ হচ্ছে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের মাধ্যমে। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও গল্পটা একই রকম: পঙ্গু অর্থনৈতিক দুর্দশা, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী শাসনের মিশেলে জনগণ তাদের সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।
এই মুহূর্তে কেন্দ্রবিন্দু কাঠমান্ডু। জেন-জি প্রজন্মের এই বিক্ষোভ কেবল সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের কারণেই নয়; এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং ক্ষমতাশালীদের সন্তানদের (যাদের বলা হচ্ছে 'নেপো কিডস' ও 'নেপো বেবিজ') অযাচিত সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
গত কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সরব ছিলেন নেপালি তরুণেরা। তারা টিকটক, রেডিটসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে 'নেপো কিডস', 'নেপো বেবি' হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করে আসছিলেন।
এরই মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নেপাল সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ও মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দিলে তরুণদের এই প্রতিবাদ নতুন করে গতি পায়। প্রতিবাদ জানাতে এবার অনলাইন ছেড়ে রাজপথে নামেন হাজার হাজার নেপালি তরুণ। তাদের এই বিক্ষোভ এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।

বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞা ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত রূপ নেয় সহিংসতায়। প্রতিবাদকারীরা সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয় সরকার। সবশেষে আজ মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন কয়েক সপ্তাহের লাগাতার অস্থিরতার পর। তার আগে সহিংস সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক।
নেপালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এই নাটকীয় মুহূর্তটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কাঠমান্ডুর চলমান দৃশ্যগুলো এক বছর আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যারা দেখেছেন, তাদের কাছে তা অদ্ভুতভাবে পরিচিত মনে হবে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। স্বৈরাচারী শাসন, ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রবল দাবির মুখে ঢাকার রাজপথ যেমন বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে প্লাবিত ছিল, সরকারি ভবনগুলো অবরোধ করা হয়েছিল এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল–একই চিত্র এখন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে নেপালে।
নেপালে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার এই নাটকীয় মুহূর্ত এক বছর আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে। কাঠমান্ডুর রাজপথে 'জেন জি' প্রজন্মের তরুণরা সরকারি ভবনে হামলা চালাচ্ছিল, কারফিউ অমান্য করছিল এবং কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল—যা গত বছর গনভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
উভয় দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই ছিল আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত জনরোষকে সংগঠিত করে আন্দোলনকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়। বিতর্কিত এই ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা নেপালে আগুন আরও উসকে দিয়েছে, আর বাংলাদেশেও একই ধরনের ডিজিটাল সীমাবদ্ধতা জনরোষ বাড়িয়েছিল। এইভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তরুণরা দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর নেতাদের পদচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে জনরোষের মুখে সরকারের পতনের সবচেয়ে প্রতীকী ও দৃশ্যত উদাহরণ সম্ভবত ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কা থেকে উঠে আসে। একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটি এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়। শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের দুই দশকের শাসনামলে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, অসহনীয় ঋণ আর ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এই সংকটের মূল কারণ।

যদিও শ্রীলঙ্কার পতনের বীজ বহু বছর ধরেই রোপিত হয়ে আসছিল। ভুল অর্থনৈতিক নীতি এবং বিতর্কিত বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ, বিশেষ করে চীনা ঋণের ওপর ব্যাপক নির্ভরতা, এর প্রধান মূলে ছিল। ২০১৯ সালে কার্যকর হওয়া কর হ্রাস, ইস্টার বোমা হামলায় পর্যটন শিল্পের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর সম্মিলিত আঘাত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে তলানিতে নামিয়ে আনে। এই রিজার্ভ ছাড়া, শ্রীলঙ্কার পক্ষে আর প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা সম্ভব ছিল না।
২০২২ সালের প্রথম দিকে সংকট তীব্রভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জ্বালানি, রান্নার গ্যাস এবং ওষুধের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য শ্রীলঙ্কানরা দীর্ঘ, যন্ত্রণাদায়ক লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতো। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাও বহু মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। এর ওপর ২০২১ সালে রাসায়নিক সারের ওপর আকস্মিক ও বিপর্যয়কর নিষেধাজ্ঞা কৃষকদের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়, যা খাদ্যের অভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই পরিস্থিতিতে জনরোষ প্রথমে চাপা থাকলেও, ধীরে ধীরে তা ফুঁসে ওঠে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে লণ্ঠন হাতে বিচ্ছিন্ন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয় – যেখানে পরিবারগুলো মোমবাতির আলোয় একটিমাত্র খাবার ভাগ করে খাচ্ছিল। দ্রুতই এই বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং 'আরাগালায়া' (সংগ্রাম) নামে পরিচিত একটি ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়। জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে নাগরিকরা অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে একজোট হয়। "গোটাগো গামা" (গোটা বাড়ি যাও, যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের প্রতি ইঙ্গিত করে) স্লোগান আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
আন্দোলনটি ২০২২ সালের জুলাই মাসে এক নাটকীয় পরিণতি লাভ করে। ৯ই জুলাই, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী হতাশা ও পরিবর্তনের সম্মিলিত ইচ্ছায় উজ্জীবিত হয়ে কলম্বোয় প্রবেশ করে। তারা প্রেসিডেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন (টেম্পল ট্রিজ) এবং সচিবালয় দখল করে নেয়। ওই দিনের দৃশ্য এখনও জনসাধারণের মনে গেঁথে আছে: সাধারণ নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছে, তার জমকালো শয়নকক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট ভবনের রান্নাঘরে খাবার তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীকগুলি যেন তাদের ক্ষোভ প্রকাশের ক্যানভাসে পরিণত হয়ে ওঠে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে অনেক চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে সামরিক জেটে করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি প্রথমে মালদ্বীপে এবং তারপর সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন, যেখানে তিনি অবশেষে ইমেইলের মাধ্যমে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ক্ষমতাচ্যুতির পর শ্রীলঙ্কার নেতৃত্ব আসে রনিল বিক্রমাসিংহের হাতে। তিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হলেও শুরুতে অনেকের কাছে ছিলেন অজনপ্রিয় পছন্দ। পরে সংসদ তাঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে।
তবুও শ্রীলঙ্কার সামনে এখনো কঠিন বাস্তবতা রয়ে গেছে। বিশাল ঋণের বোঝা, গভীর কাঠামোগত সমস্যা এবং দুর্নীতি দমনের মতো বড় সংস্কারের প্রয়োজন। 'আরাগালায়া' আন্দোলন এক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছিল, কিন্তু একটি স্থিতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত শ্রীলঙ্কা গড়ার সংগ্রাম এখনো চলছেই।

যখন পতন হলো বাংলাদেশের ১৫ বছরের একাধিপত্যবাদী শাসনের
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দুপুর ১২টা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল দেশজুড়ে। মাসের পর মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান তখন যেন এক চূড়ান্ত পরিণতি পেতে যাচ্ছে–এমনটাই অনুভব করছিলেন দেশের মানুষ। অনেকেরই বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হতে চলেছে।
ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নিতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ততক্ষণে বিক্ষোভকারী ও সাধারণ জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন এবং জাতীয় সংসদ ভবনের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিলেন। একই সময়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে থানাগুলোতে হামলা শুরু হয়।

সেই বিক্ষোভের মূল দাবি ছিল একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাপক নিষ্ঠুরতা – যার পেছনে হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে–অভূতপূর্ব জনরোষের জন্ম দেয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই বিক্ষোভ চলাকালীন প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শেষ থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে।
এটি অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম গণঅভ্যুত্থান ছিল না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি বহুবার রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। তবে ইতিহাসে এই প্রথমবার একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হলো।
সর্বশেষ বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল ১৯৯০ সালে, যার ফলে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন হয় এবং দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশে গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনের আশা জাগালেও সময়ের সাথে সাথে হাসিনার সরকার বিরোধী দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে দমন করে। ২০১১ সালে আইনি সংশোধনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিজেদের আধিপত্য নিশ্চিত করে।
উত্তাল নেপালে জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
গত সপ্তাহে নেপালে ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি বিশৃঙ্খলা আর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় টালমাটাল হয়ে ওঠে। সরকারের নতুন নিবন্ধন ও তদারকি নীতি মানতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সোমবার কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। জনতা সংসদ ভবন ঘিরে ফেললে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির অভিযোগে চলমান এই বিক্ষোভে সোমবার অন্তত ১৯ জন নিহত হন।
এর আগে ওই দিন সকালে আন্দোলনকারীরা ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট চত্বরের একাংশে ঢুকে পড়ে সরকারি দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যান। মূলত নেপালের 'জেন জি' প্রজন্মের তরুণ বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালায়। তারা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ অমান্য করে এবং এমন তীব্রতার সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানায় যে রাজধানী দ্রুতই বিশৃঙ্খলায় ডুবে যায়।
পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয় যে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করা হয়। দেশজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ায় বিমানবন্দরের আশেপাশে ৩০০ জনেরও বেশি সামরিক কর্মী জড়ো হন এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো সক্রিয়ভাবে মন্ত্রীদের তাদের সরকারি বাসভবন থেকে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, পরিস্থিতি তীব্র হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ওলিকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে জানা যায়, যা প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি এক গভীর ও তাৎক্ষণিক হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে।
এই প্রেক্ষাপটে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি নিজেই জানান যে তিনি 'সমস্যার সমাধানে সহায়তা করতে এবং রাজনৈতিক উপায়ে সংকট নিরসনে সাহায্য করতে' পদত্যাগ করছেন – একটি দেশ যখন পতনের দ্বারপ্রান্তে, তখন এমন বাধ্যবাধকতাই দেখা যায়। একটি বিতর্কিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা দেরিতে প্রত্যাহার করা হলেও ততক্ষণে শহরজুড়ে যে ক্ষোভের ঢেউ উঠেছিল, তা আর থামানো যায়নি। রাজপথে থাকা সাধারণ নাগরিকদের কাছে এই পদত্যাগ কেবল একটি সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছে।