নেপালের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে, অভিযোগ জেন-জিদের

নেপালে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনা টহল শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। খবর বিবিসি'র।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) নেপালে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ দাঙ্গায় রূপ নেয়। আগুন দেওয়া হয় সংসদ ভবন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। রাজনীতিবিদদের বাসভবনও ভাঙচুর করা হয়। সহিংসতায় ৩০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি দুই দিনে আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ।
এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। তবে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া 'জেন-জি' গোষ্ঠীগুলো সহিংসতার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, 'সুযোগসন্ধানীরা' আন্দোলনকে ছিনতাই করেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কাঠমান্ডুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়েছে। শহরজুড়ে কারফিউ থাকায় পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত ছিল। তবে এখনো বিভিন্ন স্থানে জ্বলতে থাকা ভবন থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী। তারা আন্দোলনরত জেন-জি তরুণদের শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, শিক্ষার্থী নেতারা নতুন করে দাবির তালিকা তৈরি করছেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তাদের এক প্রতিনিধি।
দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সহিংসতা ও ভাঙচুর করলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সহিংসতা ও লুটপাটের অভিযোগে। উদ্ধার করা হয়েছে ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্রও।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সামরিক তল্লাশিচৌকিতে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেনারা মানুষকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছেন। লাউডস্পিকারে বারবার শোনা যাচ্ছে, 'অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নয়'।
তবু কিছু তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমেছেন। তারা মাস্ক পরে, হাতে ময়লার ব্যাগ নিয়ে আন্দোলনে তৈরি হওয়া আবর্জনা পরিষ্কার করছেন।
নেপালে পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে অনেকে স্বাগত জানালেও, আন্দোলনে সহিংসতা ও ভাঙচুর দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নেপালের সাধারণ মানুষ।
বিবিসিকে ৩৬ বছর বয়সী রাখশ নিরুলা নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এ ধরনের ঘটনা ঘটানো উচিত হয়নি।'
ললিতপুরের উদ্যোক্তা প্রভাত পোড়েল জানান, সুপ্রিম কোর্টের মতো সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, 'ওটা তো আমাদের জাতীয় সম্পদ।'
অন্যদিকে অনেক আন্দোলনকারী মনে করছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দুষ্কৃতকারীরা দখল করে নিয়েছে। সেনাবাহিনীও একই দাবি করছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেত বিবিসিকে বলেন, 'আমরা মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি, যারা সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে।'
প্রতিবাদকারীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তাদের আন্দোলন অতীতে অহিংস ছিল এবং এখনও রয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ নাগরিক অংশগ্রহণের নীতিতে ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নাগরিক ও জনসম্পদ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে কাজ করছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বুধবারের পর আর কোনো কর্মসূচি নেই। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যেন কারফিউ জারি করে তা-ও তারা আহ্বান জানিয়েছেন।