বিক্ষোভের মধ্যে নেপালের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি কয়েদি

নেপালে সহিংস সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের একটি কারাগারে অন্তত পাঁচ কিশোর বন্দি নিহত হয়েছে এবং দেশজুড়ে বিভিন্ন কারাগার থেকে অন্তত ১৩ হাজার কয়েদি পালিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
দেশজুড়ে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। এর ফলে বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে, যার পরিপ্রেক্ষিতে নেপাল সেনাবাহিনী বুধবার দেশব্যাপী বিধিনিষেধ আরোপের পর কারফিউ জারি করে।
কয়েদিরা এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, যার জেরে মঙ্গলবার থেকে বেশ কয়েকটি কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দ্য রাইজিং নেপাল পত্রিকার প্রতিবেদনা বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে বাঁকে জেলার বৈজনাথ রুরাল মিউনিসিপালিটি-৩-এ নওবাস্তা সংশোধনাগারে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ কিশোর বন্দি নিহত হয়েছে।
পত্রিকাটি নওবাস্তা কিশোর সংশোধনাগার অফিসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বন্দিরা নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে পাঁচ কিশোর বন্দি নিহত ও চারজন গুরুতর আহত হয়।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এ ঘটনায় কারাগারের ৫৮৫ জন বন্দির মধ্যে ১৪৯ জন এবং কিশোর সংশোধনাগারের ১৭৬ জন বন্দির মধ্যে ৭৬ জন পালিয়ে গেছে।
মাইরিপাবলিকা পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় ৭ হাজার বন্দি বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়েছে।
পত্রিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে বলে, দিল্লিবাজার কারাগার (১ হাজার ১০০), চিতওয়ান (৭০০), নাখু (১ হাজার ২০০), সুনসারির ঝুমকা (১ হাজার ৫৭৫), কাঞ্চনপুর (৪৫০), কৈলালী (৬১২), জলেশ্বর (৫৭৬), কাস্কি (৭৭৩), ডাং (১২৪), জুমলা (৩৬), সোলুখুম্বু (৮৬), গৌর (২৬০) ও বাঝাংসহ (৬৫) বেশ কয়েকটি কারাগার থেকে বন্দি পালানোর খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'পালানোর সময় বন্দিরা নিরাপত্তা কর্মীদের হুমকি দেন। বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা এখন পলাতক থাকায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, প্রতিশোধের ভয়ে এসব অপরাধের শিকার অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।'
আলাদা একটি প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, দক্ষিণ নেপালের বাগমতী প্রদেশের সিন্ধুলিগাদির জেলা কারাগার থেকে ৪৩ জন নারীসহ মোট ৪৭১ জন বন্দি পালিয়ে গেছেন।
কারা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্দিরা বুধবার সকালে কারাগারের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রধান ফটক ভেঙে পালিয়ে যান।
পুলিশ সুপার লালধ্বজ সুবেদি নিশ্চিত করেছেন যে কারাগারের সব বন্দি পালিয়ে গেছেন।
দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকা জানিয়েছে, দক্ষিণ নেপালের নওয়ালপারাসি পশ্চিম জেলা কারাগার থেকে ৫০০ জনেরও বেশি বন্দি পালিয়েছেন।
পত্রিকাটি বলেছে, 'নওয়ালপারাসি পশ্চিমের জেলা কারাগারে বন্দিরা আগুন ধরিয়ে দেন এবং মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে পালিয়ে যান।'
তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও বেশিরভাগ বন্দিই পালিয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে কাঠমান্ডুতে দিল্লিবাজার কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করা এক বন্দিকে স্থানীয় যুবকরা ধরে নেপালি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন।
বুধবার বিকেলে সপ্তরির রাজবিরাজ কারাগারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বেশ কয়েকজন বন্দি পালিয়ে যান। কর্মকর্তারা জানান, নিরাপত্তা কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছুড়লেও কিছু বন্দি পালিয়ে যান। ঘটনার সময় কারাগারে ৩৯৭ জন বন্দি ছিলেন।
পরসা জেলায় বন্দিরা বীরগঞ্জ কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি বড় গর্ত করে পালানোর চেষ্টা করেন। কারাপ্রধান খেমরাজ ভুসাল বলেন, নিরাপত্তা কর্মীদের কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
খবরহাব নামের একটি নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক বন্দি কারাগারের একটি জানালার কাঁচ ভেঙে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে দৌড়ে পালাতে দেখে স্থানীয়রা ধাওয়া করে ধরে ফেলে।' স্থানীয়রা ওই বন্দিকে ধরে নিকটবর্তী নিরাপত্তারক্ষী বাইনির কাছে হস্তান্তর করে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
আরেক ঘটনায় পশ্চিম নেপালের পাহাড়ি জেলা জুমলার চন্দননাথ পৌরসভা-৬-এর একটি কারাগার থেকে অন্তত ৩৬ জন বন্দি পালিয়ে গেছেন বলে নিউজ পোর্টালটি জানিয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাত ১২টা ২ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। বন্দিরা কারাগারের ওয়ার্ডেনকে কাঠের দণ্ড দিয়ে আঘাত করে প্রধান ফটক ভেঙে পালিয়ে যায়।
জুমলার পুলিশপ্রধান ডিএসপি রবিন বাবু রেগমি বলেন, পলাতক বন্দিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'কারাগারে মোট ৯৮ জন বন্দি ছিল। এর মধ্যে ৩৬ জন পালিয়ে গেছেন, ৬২ জন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। কারাগার সুরক্ষিত রাখতে নেপাল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে মোট ১৫ জন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।'