রাশিয়া নয়, পোল্যান্ডের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইউক্রেন: প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের একটি গ্রামে যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে, তা রাশিয়া নয় বরং ইউক্রেন ছুঁড়েছে বলে জানা গেছে প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদনে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। খবর রয়টার্সের।
অভিযোগ উঠেছিল পোল্যান্ডের প্রজেওডো গ্রামে মঙ্গলবার রাতে রাশিয়ার তৈরি মিসাইল হামলায় দুই পোলিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়। বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আঘাত হানে ওই গ্রামে। তবে এমন দাবি শুরুতেই সম্পূর্ণ 'উস্কানিমূলক' বলে দাবি করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, "পোলিশ মিডিয়া রুশ মিসাইল বিস্ফোরণ সম্পর্কে যে দাবি করছে, তা উস্কানিমূলক।" রাশিয়ার একজন সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেন, রাশিয়ার ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোল্যান্ডের ভূখণ্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম নয়। বরং পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রই আঘাত হেনেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তদন্তেও এমন তথ্যই উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার থেকে আগত ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনীর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রই আঘাত হেনেছে পোল্যান্ডের গ্রামে।
এ ঘটনায় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন-
বিস্ফোরণের পরপরই পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রকেট মিসাইলটি ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম প্রজেওডোতে গিয়ে আঘাত হানে। খাদ্যশস্য শুকানোর একটি অবকাঠামোতে এটি আঘাত হানে বলে জানানো হয় দেশটির গণমাধ্যম।
ঘটনার পর পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওয়ারশতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে 'তাত্ক্ষণিক তলব করে এ ঘটনার ব্যাখ্যা' চাওয়া হয়।
এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং পোলিশ গণমাধ্যম এবং কর্মকর্তাদের 'পরিস্থিতির উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃত উস্কানি' দেওয়ায় অভিযুক্ত করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলমান জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহ বিশ্ব নেতাদের অনেকে। বিস্ফোরণের ঘটনায় বালিতেই নেতারা জরুরি বৈঠকে বসেন বলে খবর গণমাধ্যমের। বাইডেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ন্যাটোভুক্ত প্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি জাপানও উপস্থিত ছিল।
বৈঠকের পর বাইডেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত হওয়া বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, এটি রাশিয়া থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে নাও হতে পারে।
এদিকে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদাও বলেছেন, কে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুঁড়েছে তার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই; তবে এটি রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র হতে। তিনি বলেন, "কে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করেছে তার যথার্থ প্রমাণ আমাদের কাছে এই মুহূর্তে নেই।"
এর আগে, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের পর ওয়ারশ তার সামরিক বাহিনীকে 'হাই অ্যালার্টে' (উচ্চ সতর্কতা) থাকার নির্দেশ দেয়। মুখপাত্র পিওর মুলার সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সামরিক ইউনিটকে প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে 'খুবই গুরুতর' বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, "যেভাবে রুশ মিসাইল পোল্যান্ডে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলবে। একটি ন্যাটোভুক্ত দেশে রুশ মিসাইল হামলা! এটি সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর হামলা। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।"