ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝাতে কাতার, সৌদি আরব ও ওমানকে বলেছে করেছে তেহরান। এর বিনিময়ে, পারমাণবিক আলোচনায় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত ইরান।
গতকাল সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
এদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা ও তাদের শীর্ষ কূটনীতিকরা পুরো সপ্তাহজুড়ে ফোনালাপ চালিয়ে গেছেন—তারা একে অপরের সঙ্গে, তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ইসরায়েল ও ইরানের এই সংঘাত যাতে আর না বাড়ে, তা ঠেকানোর চেষ্টা করতে বলেছেন তারা।
ইরানের একজনের সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তাহলে পারমাণবিক আলোচনায় ইরান নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।
সরকার সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, উপসাগরীয় দেশগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন—কারণ তারা আশঙ্কা করছে, এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ওই উপসাগরীয় সূত্র আরও জানান, কাতার, ওমান এবং সৌদি আরব সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে তারা ইসরায়েলকে চাপ দেয় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে এবং তেহরানের সঙ্গে আবার পারমাণবিক আলোচনায় ফিরতে।
আঞ্চলিক সূত্র এবং ইরানের উপসাগরীয় যোগাযোগ সম্পর্কে অবহিত একজন কর্মকর্তা জানান, কাতার ও ওমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তেহরান। তেহরান তাদের পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানিয়েছে তেহরান।
একজন কর্মকর্তা জানান, ওমান ও কাতারকে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ তারা ইসরায়েলি হামলার মুখে রয়েছে, ততক্ষণ কোনো আলোচনায় বসবে না। ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়া শেষ হওয়ার পরই কেবল তারা গঠনমূলক পারমাণবিক আলোচনায় বসবে।
মন্তব্য জানতে চাইলেও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাতার, ওমান ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, হোয়াইট হাউস, এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকেও কোনো মন্তব্য আসেনি।
এই সংঘাত বন্ধে কোনো কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাচি হানেগবি সোমবার আর্মি রেডিওকে বলেন, 'এখনো সেটা বলার সময় হয়নি। কেউ যুদ্ধে নামে আর তিনদিন পর সেটি শেষ করার চেষ্টা করে না।'
এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল এখনই যুদ্ধবিরতির চিন্তা করছে না।
গত শুক্রবার সকালে ইসরায়েল ইরানের উপর আকস্মিক হামলা চালায়, যাতে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিহত হন এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা এই সামরিক অভিযান আরও জোরালোভাবে চালিয়ে যাবে, যার উদ্দেশ্য হলো তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করা।
অন্যদিকে, ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সামরিক নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
আলোচনা পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ
একজন আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খসড়া করছে, যার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার দ্বার ফের উন্মুক্ত করা।
গত রোববার মাসকটে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে যে ষষ্ঠ দফা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায় ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পরদিন।
রয়টার্সকে আঞ্চলিক সূত্ররা জানান, ওমানের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইরান যেন এক থেকে তিন বছরের জন্য পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি স্থগিত করে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) তা গভীরভাবে পরিদর্শনের সুযোগ দেয়। এর বিনিময়ে, যুক্তরাষ্ট্রকে এই প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত এই চুক্তির লক্ষ্য হলো আস্থা গড়ে তোলা, যাতে ইরান ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি পায়—যা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অধীনে অনুমোদিত ছিল। এছাড়া, একটি আন্তর্জাতিক ইউরেনিয়াম কনসোর্টিয়াম গঠন করে সেটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে যুক্ত করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে, যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
যদি প্রস্তাবের সঙ্গে শর্ত মিলে যায় তাহলে তেহরান চুক্তি করতে রাজি।
এর বিনিময়ে, ইরানি সূত্র জানান, তেহরান আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।