‘যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছু’—ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে কী বোঝাতে চাইলেন?

কানাডা থেকে ফেরার পথে, এয়ার ফোর্স ওয়ান উড়াল দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিমানেই সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
তিনি জানান, শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করাতে নয়, বরং এর চেয়েও 'বেশি কিছু' অর্জনের লক্ষ্যে তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন। তার ভাষায়, তিনি চান—"যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছু।"
কিন্তু এর অর্থ কী? সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে ট্রাম্প এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
তিনি বলেন, "একটা আসল সমাপ্তি"—যার অর্থ হতে পারে তিনি চান ইরানের সম্পূর্ণ পরাজয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে হবে।
তবে এমন ফল অর্জনের জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন হবে বলে স্বীকার করেন ট্রাম্প। যদিও পরে একই কথোপকথনে তিনি বলেন, "এখন (ইরান) আলোচনার মেজাজে নেই।"
ট্রাম্প আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলা শুরুর আগে তিনি যে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ইরান তা গ্রহণ করলে—এখনকার পরিস্থিতি এড়ানো যেত। এই বক্তব্য তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ান ওয়াশিংটনে অবতরণ করার পর তাঁর সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে'-ও পুনরায় তুলে ধরেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে ফেরার পরে জানিয়েছেন, আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এরপর কী ঘটবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
তবে স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, তিনি একটি আরও স্থায়ী এবং একতরফা সমাধান চান—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শর্ত অনুযায়ী। যেখানে ইরানকে তাঁর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থেকে একেবারে সরে আসতে হবে।
এ ধরনের "সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ"- এর অর্থ হবে ইরানের প্রধান কৌশলগত লক্ষ্যগুলো থেকে সরে দাঁড়ানো; সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সম্ভবত কোনো পাল্টা ছাড়ও আদায় করে নিতে পারবে না।
মোসাদের সদর দপ্তরে আঘাত হেনেছে ইরানের মিসাইল
তেহরান টাইমস, বিবিসি
ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হেনেছে ইরানের মিসাইল। আজ মঙ্গলবার এ থেকে বাদ যায়নি জায়নবাদী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরও।
ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে মোসাদের সদর দপ্তরের বহুতল দালানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
তেহরান টাইমস জানায়, এটি গ্লিলত এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা কমপ্লেক্সের একটি অংশ, যেটি আমান লজিস্টিকস সেন্টার নামে পরিচিত।
স্থানীয় একটি বাস পার্কিংয়ে হামলার ঘটনার বিষয়ে বেশি প্রচার চালিয়ে এ ঘটনা আড়াল করতে চাইছে ইসরায়েল। তবে ইরানি গণমাধ্যমের দাবি, তাদের দেশের গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত হয়েছে যে, হামলায় ইসরায়েলের কৌশলগত স্থাপনাগুলো সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আমান লজিস্টিকস সেন্টার এবং হার্জিলিয়া অবস্থিত মোসাদের সদর দপ্তর।

এদিকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে হামলার বিষয়ে সংবাদ চেপে যাচ্ছে ইসরায়েল। তেহরান টাইমস জানায়, শুরুতে কিছু হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি গণমাধ্যম মিসাইল হামলার ছবি প্রকাশ করলেও, পরে দ্রুতই সেগুলো সরিয়ে ফেলে। এই ঘটনাও প্রমাণ করে আমান সেন্টারটি কৌশলগত স্থাপনাই।
এছাড়া, হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমগুলোর মতে, হার্জিলিয়ায় মোসাদের অভিজাত ইলেকট্রনিক নজরডারি ও গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০- এর একটি গোপন ব্যাকআপ সাইট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) বরাতে বার্তাসংস্থা তাসনিম জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মোসাদকে আঘাত করেছে।
তাসনিমের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপস্থিতি সত্ত্বেও—আইআরজিসি'র এরোস্পেস ফোর্সের যোদ্ধারা একটি প্রতিঘাতমূলক অভিযানে, ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।"
এদিকে মোসাদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে ইরানের দাবি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি তেল আবিব। এছাড়া, হামলার শিকার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিষয়ে ইসরায়েলে কার্যক্রম পরিচালনা করা গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।