পুতিনের অপেক্ষা! এরদোয়ানের মধুর প্রতিশোধ! না অন্য কারণ?

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে একটি ফাঁকা কক্ষে প্রায় এক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ঘরভর্তি সাংবাদিক-আলোকচিত্রীদের সামনে এমন পরিস্থিতিতে পুতিনকে কিছুটা অস্বস্তি ও অপ্রস্তুত বোধ করতে দেখা যায়।
অনলাইনে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে পুতিনকে প্রায় ৫০ সেকেন্ড এরদোয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, তেহরানের একটি ভবনের কক্ষে বৈঠকের জন্য প্রবেশ করছেন পুতিন। কিন্তু সেখানে ঢুকে দেখেন শুধু দুটি খালি চেয়ার রাখা এবং তাকে অভ্যর্থনা জানানোর কেউ নেই।
এরদোয়ানের অনুপস্থিতিতে পুতিনের চোখেমুখে অস্বস্তিভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কী করবেন বুঝতে না পেরে তিনি চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, আঙুল মটকাতে থাকেন এবং শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক তাকান। ৫০ সেকেন্ড পর এরদোয়ান ঘরে ঢোকেন এবং একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়ে করমর্দন করেন। এরদোয়ান মুখে হাসি ফুটিয়ে পুতিনকে জিজ্ঞাসা করেন, হ্যালো, কেমন আছেন আপনি?
কিন্তু বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নেতা পুতিনের কাছে এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নতুন। বরং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য আলাদা খ্যাতি আছে তার। পোপ ফ্রান্সিসকে একবার ২০১৩ সালে এবং পরে ২০২০ সালে প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করান পুতিন। ২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ৪৫ মিনিট অপেক্ষায় রেখেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
একই ঘটনা ঘটেছে এরদোয়ানের সাথেও। ২০২০ সালে মস্কোতে এরদোয়ানকে প্রায় দুই মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন পুতিন। তুর্কি গণমাধ্যমগুলোর দাবি, সেদিন এরদোয়ান এবং তার সফরসঙ্গীদের খাসকামরার পার্শ্ববর্তী একটি কক্ষে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং সেই মুহূর্তের ফুটেজ রুশ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করছেন, এবার তেহরানে সেদিনের ঘটনারই বদলা নিয়েছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট!
এক টুইটার পোস্টে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম সংস্থা ন্যাশনাল নিউজের সিনিয়র প্রতিনিধি জয়েস কারাম বলেন, "ভ্লাদিমির পুতিনকে যে ৫০ সেকেন্ড অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিলেন এরদোয়ান, সেসময় পুতিনের হতবাক অভিব্যক্তিই বলে দেয় ইউক্রেন যুদ্ধের পর সবকিছু কতটা বদলে গেছে!"
রুশ সংবাদমাধ্যম প্রাভদা জানিয়েছে, বৈঠকের দিন রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় পুতিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভের সাথে করিডরে দেখা হয়ে যায় এরদোয়ানের। তখন এরদোয়ান তার সাথে তুর্কী ভাষায় কথা বলতে থাকেন (পেসকভ একজন তুর্কোলজিস্ট)। ক্রেমলিনের মুখপাত্র পরে তুর্কি নেতার সাথে কথোপকথনের ব্যাখ্যা দেন এই বলে—'তার সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি।'
শুধু তা-ই নয়, বৈঠকে পুতিনের আগে কথা শুরু করেও প্রটোকল ভঙ্গ করেছেন এরদোয়ান।
তুর্কী প্রেসিডেন্টের ভাষ্যে—'আমাদের মধ্যে প্রায়ই যোগাযোগ হয়।' কিন্তু আগে আলাপ শুরুর কথা ছিল রুশ প্রেসিডেন্টের।
গত ১৯ জুলাই তেহরানে এরদোয়ান ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাশিয়ার হাতে অবরুদ্ধ হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য যেন ইউক্রেনের বন্দর ছাড়তে পারে, তার জন্য মধ্যস্থতাকারী হয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করছেন এরদোয়ান।
আলোচনায় মধ্যস্থতা করায় পুতিন তুর্কি নেতার প্রশংসা করলেও, তুরস্ক-সিরীয় সীমান্তের দক্ষিণে একটি বাফার জোন নির্মাণের জন্য এরদোগানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুতিনের ভালো লাগেনি।
- সূত্র: গার্ডিয়ান ও প্রাভদা