ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলের হামলা

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ হামলার খবর জানানো হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক সংবাদ উপস্থাপিকা খবর পাঠ করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে ভবনটিতে হামলা হয়। এ সময় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরে ওই উপস্থাপিকা সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। মুহূর্তেই সেখানে কালো ধোঁয়া ছেয়ে যায়।
পরে মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই উপস্থাপিকার নাম সাহার ইমামি। তিনি আবারও সরাসরি সম্প্রচারে যুক্ত হয়েছেন।
হামলার কিছুক্ষণ আগে 'ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মুখপাত্র অদৃশ্য হওয়ার পথে' বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি এও বলেছিলেন, তেহরানের ওই এলাকার আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার এই সতর্কবার্তার পর ভবনটিতে হামলা হলো।
হামলার পর বিস্তারিত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত অবসানে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে এরদোয়ান-পুতিন
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের সমাধানে কূটনীতিক পথ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আজ সোমবার (১৬ জুন) তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই নেতা (পুতিন-এরদোয়ান) এক ফোনালাপে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় উভয়েই এই সংঘাতের অবসান এবং যত দ্রুত সম্ভব কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, চলমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারো আলোচনার টেবিলে ফেরা। এর আগেও আঙ্কারা একাধিকবার ইরানের সাথে বিশ্বশক্তিগুলোর পূর্ববর্তী পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, ক্রেমলিনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, পুতিন ও এরদোয়ান ইরানের ওপর ইসরায়েলের "বলপ্রয়োগমূলক হামলার" নিন্দা জানিয়েছেন।
ক্রেমলিন বলছে, "ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে অব্যাহত উত্তেজনা নিয়ে দুই নেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা ইতোমধ্যে বহু প্রাণহানি ডেকে এনেছে এবং দীর্ঘমেয়াদে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।"
উভয় নেতা সকল বিরোধ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে নিষ্পত্তির পক্ষে মত দেন, বিশেষত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানে।
এই অবস্থান স্পষ্ট করছে যে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর একটি বড় অংশ সামরিক পথে নয়, বরং কূটনৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে এক অনিশ্চিত যুদ্ধের দোলাচল থেকে বের করে আনতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এই বার্তাকে আদৌ গুরুত্ব দেবে কি-না?
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশিয়াকে প্রত্যাখ্যান করল ইইউ
আল জাজিরা
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশিয়ার সম্ভাব্য ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। রাশিয়ার 'বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য' উল্লেখ করে ইইউ জানায়, দেশটি এই সংঘাতে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের যোগ্য নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র আনোয়ার এল আনউনি বলেন, "সম্প্রতি রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে একটি অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতা—বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা খাতে—গভীর হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া কখনোই নিরপেক্ষ বা বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হতে পারে না।"
উল্লেখ্য, এই বিবৃতি আসে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েল-ইরান সংকটে মধ্যস্থতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেন, "তিনি (পুতিন) প্রস্তুত আছেন। তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এ বিষয়ে কথা বলেছি।"
ট্রাম্প জানান, পুতিন মধ্যস্থতাকারী হতে চাইলে তার কোনো আপত্তি নেই। তিনি বিষয়টিকে 'খোলা মনে' দেখবেন।
তবে ইউরোপ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মধ্যস্থতার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষিতে ইউরোপ এই সম্ভাবনাকে আমলেই নিচ্ছে না।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর মস্কোর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এমন অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো তার নিরপেক্ষতা বা গঠনমূলক ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। এই প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার মধ্যস্থতা যেকোনো পক্ষের আস্থার সংকটে পড়বে—এটাই ইউরোপের বার্তা।