উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তহবিল কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় ছিল। তবে এ তহবিল কমানোর গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষায় তা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।
মার্চের শুরুতে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামই ছিল এমন 'তহবিল কাটছাঁটের কারণে কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা'।
কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ নয়।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় শল্যচিকিৎসার মতো নিখুঁতভাবে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি এ আইন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও প্রযোজ্য।
তবে এটি স্পষ্ট যে গাজায় ইসরায়েলী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো শিক্ষার্থীরা এর লক্ষ্যবস্তু।
আন্দোলনগুলোর কেন্দ্রবিন্দু কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরই সবার আগে নেমে আসে ট্রাম্পের খড়্গ হস্ত। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করেছে। অপরদিকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী ও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মাহমুদ খলিলকে গত ৮ মার্চ ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, অবিশ্বাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চরম অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। প্রায় সময়ই বিভিন্ন আটক ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অনেকের ভিসা বাতিল করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি আলোচিত হয়েছে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ২৬ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া তুর্কি শিক্ষার্থীর ঘটনাটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই শিক্ষার্থীকে সাদাপোশাকে থাকা আইসিই কর্মকর্তারা থামান এবং তাকে গ্রেপ্তার করেন। বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে যাওয়ার পথে ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলছে, টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি অঙ্গরাজ্য— নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, আইওয়া, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও টেক্সাসে বসবাসরত বাংলাদেশি এফ১ ভিসা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়েছে।
আমাদের কথা বলা সাতজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র একজন গত বছর ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
সতর্কবার্তা ও ভ্রমণ পরিকল্পনার পরিবর্তন
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বার্তা পাঠিয়েছে।
ভার্জিনিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, "আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের শহরের বাইরে বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে সবসময় আইনি নথিপত্র সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে। এটি নতুন নির্দেশনা।"
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভার্জিনিয়ার ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, "আমাদেরকে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তারা বলেছে, পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল যে যেকোনো সময় নতুন কোনো দেশ ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হতে পারে। তাই আমাদের ভ্রমণের সময় খুব সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।"
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় বারবার আমাদের সতর্ক করে বলছে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।"
ক্যালিফোর্নিয়ার এক শিক্ষার্থী বেশ আগেই সতর্ক বার্তা পান। ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত নভেম্বরেই তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, যেসব শিক্ষার্থী তাদের নিজ দেশে আছেন, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে বলা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই শিক্ষার্থী প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেন, "তবে এখন বিষয়টি পুরোপুরি বোধগম্য। এখন সবকিছুই অনিশ্চিত মনে হচ্ছে, যদিও আমার সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।"
তিনি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাংলাদেশে সফরে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তিনি যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ে (ওপিটি) কাজ করছেন। তিনিও আগামী মাসে বাংলাদেশে ভ্রমণের চিন্তা বাদ দিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি তার বোনের বিয়েতে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি বলেন, "ট্রাম্প এতই অস্থির যে কখন সে আমাকে বৈধ বা অবৈধ বানিয়ে দেয়, তার কিছুই আমি জানি না।"
এরকম ভ্রমণ পরিকল্পনার পরিবর্তনের প্রবণতা ছিল সব শিক্ষার্থীর মধ্যেই। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা করছিলেন তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জের তুলনায় ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আপাতদৃষ্টিতে ছোট্ট আপস মনে হতে
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসার অন্যতম লক্ষ্য হলো স্থায়ীভাবে বসবাস। কারণ তাদের সে সুযোগ রয়েছে।
এর প্রথম পদক্ষেপ হলো, স্নাতক শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ভিসার অধীনে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের (ওপিটি) আওতায় কাজ করার সুযোগ পান।
নর্থ ক্যারোলাইনায় বসবাস করা এক শিক্ষার্থী বলেন, "এখানে কাজ করার জন্য আমাকে আমার ভিসার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে হবে। আমি এইচ১বি ভিসার জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছিলাম। তবে এর জন্য নিয়োগকারীর কাছ থেকে স্পন্সরশিপ প্রয়োজন। তবে এখন সবকিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। সবকিছু অপ্রত্যাশিত মনে হচ্ছে। যদি আমার ভিসা না হয়। তাহলে স্নাতক শেষ হওয়ার পর আমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। তাছাড়া আমি পড়াশোনার জন্য বড় ঋণ নিয়েছি। দেশে ফিরে গেলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো।"
নিউ ইয়র্কে অবস্থানকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "আমি এখানে অনেক বছর ধরে আছি। আমার একটি পরিকল্পনা ছিল কিন্তু এখন আমি অনিশ্চিত।"
কর্মস্থলেও এই শিক্ষার্থীরা অন্য অভিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পান। সেখানে তারা অভিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়েও শুনেন। তিনি বলেন, তাদের নিজেদের উদ্বেগের পাশাপাশি যখন অভিবাসীদের বহিষ্কার সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা শুনতে হয় তখন সবকিছু অনিশ্চিত লাগে।
বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও ডাইভারসিটি, ইকুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন (ডিইআই) সম্পর্কিত প্রোগামগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তিনি আরও বলেন, "এসব অনিশ্চয়তার কারণে চাকরির বাজার এতটাই খারাপ যে তিনি আর ভালো বেতন পাওয়ার জন্য চাকরি পরিবর্তন করছেন না। কারণ কেউই কাউকে নিয়োগ দিচ্ছে না।"
এছাড়াও, ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার হুমকি দিয়েছেন।
আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কারণে তিনি কানাডায় অভিবাসনে সুযোগ খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি ওপিটির মেয়াদ বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো সমস্যা পড়তে হবে না। তবে বেশিরভাগই এইচ১বি ভিসার স্পন্সরশিপ নিয়ে উদ্বিগ্ন।"
এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনায় অনেকেই পরিবর্তন আনছেন। আইওয়ায় বসবাসরত এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমি শিক্ষার্থী সংগঠনের সহ-সভাপতি হওয়ায় এখানে আমি সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গীদের কাছে পরিচিত। এবং হ্যা, এখানে সবাই উদ্বেগের মধ্যে আছে।"
ভার্জিনিয়ার এক শিক্ষার্থীও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "অনেকের সঙ্গেই আমি কথা বলেছি। যারা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন, তারা উদ্বিগ্ন। সম্ভবত আরও সময় লাগবে ও আরও কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, "আমি আমার ভিসা নবায়নের ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন। আশা করি, সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে যেমনটা আমি বলেছি, এখন আর কিছুই জানা যাচ্ছে না।" তবে ভার্জিনিয়ার এই শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করার পর ওপিটির অধীনে কাজ করছেন।
তবে টেক্সাসে এক শিক্ষার্থীর কোনো উদ্বেগ ছিল না। তিনি বলেন, "আমার গ্রিনকার্ডের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমার আইনজীবী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে চিন্তা করার কিছু নেই।"
বিজ্ঞান ও গবেষণা তহবিলের কাটছাঁট
ভার্জিনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসটিইএম প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছেন একজন পিএইচডি ক্যান্ডিডেট। তিনি বলেন, "সাধারণভাবে আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল কাটছাঁট এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে সংগ্রাম করছে।"
তিনি জানান, আগামী ফল সেমিস্টারের জন্য এবার শিক্ষার্থীদের আবেদন কম। কারণ, পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীরা তহবিল পেতে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং প্রফেসররা এখনো জানেন না তারা কী ধরনের সহায়তা দিতে পারবেন।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "আমার ল্যাবমেটস, বন্ধুরা এবং অ্যাডভাইজার 'স্ট্যান্ড আপ ফর সায়েন্স'-এর মতো বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। কারণ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট তহবিলের অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছে, অথচ এর কোনও সঠিক যুক্তি নেই। আমি এবং আমার আন্তর্জাতিক বন্ধুদের আমরা এতে পূর্ণ সমর্থন জানাই। তবে আমরা সেখানে গিয়ে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে তাদের সমর্থন জানাতে পারিনি।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে বলা হয়েছে দেশের ভিতরের মানুষ সেভাবে মত প্রকাশ করতে পারলেও আমরা সেভাবে পারছি না।"
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণগুলোর বাইরে অবস্থা আরও ভয়াবহ
তিনি বলেন, "সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো ট্রাম্প সমর্থকদের মতো অনেক মানুষ আমাদের এখানে দেখতে চায় না। একজন নারী এবং একজন 'পার্সন অব কালার' (পিওসি) হিসেবে, আমি জনসমাগমে অনেক বেশি সতর্ক থাকি। কারণ আমি যদি কোনো 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' (এমএজিএ) সমর্থকের সামনে পড়ি তখন কীভাবে প্রতিক্রিয়া তা নিয়ে সন্দিহান থাকি। ভাগ্যক্রমে, আমি এখনো ব্যক্তিগতভাবে এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। তবে আমি খুব উদ্বিগ্ন, কারণ পিওসিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ স্বাভাবিক হয়ে গেছে।"
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, "২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় 'হোয়াইট সুপ্রিমাসিস্ট' (শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী) সমাবেশ হয়েছিল। তিনি বলেন, "আমি খুব সচেতন থাকি। যাদের আমি ভালোভাবে চিনি না বা কেবল পরিচিত তাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলি না।"
আমেরিকায় শিক্ষার্থীরা কি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে?
ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বিরোধী মতামত ও ছাত্র আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়নের কারণে অনেকেই তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
আইওয়ার এক শিক্ষার্থী বলেন, "২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে আমি কখনোই আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ব্যাপারে এতটা সতর্ক হইনি। এমনকি সংবেদনশীল বা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত বিষয় ফিলিস্তিন নিয়েও এতটা সতর্ক হইনি।"
কিন্তু গত বছর পরিস্থিতি বদলে গেছে
তিনি বলেন, "২০২৪ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া ছাত্র আন্দোলনসহ সারা দেশে সাম্প্রতিক প্রতিবাদগুলো আমাদের রাজনৈতিক মতামত অনলাইনে প্রকাশের সম্ভাব্য পরিণতির কারণে সবাই আরও সচেতন হয়ে উঠেছে। তাই আমি যখন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে চাই, তখন আমার লেখা কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, বিশেষ করে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে সে বিষয়ে সতর্ক থাকি।"
তিনি ব্যাখ্যা করেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করলেও, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব গভীরভাবে পড়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা অনেকেই অনলাইনে নিজের অবস্থান নিয়ে আরও সতর্ক থাকি। কারণ আমরা জানি, অনলাইনে আমাদের উপস্থিতি অভিবাসন মর্যাদা বা ভবিষ্যতের সুযোগগুলোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।"
অনেকেই কঠোর মতামত প্রকাশ করছেন
ভার্জিনিয়ার এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। আমি আমার ইনস্টাগ্রাম বায়ো থেকে তরমুজের চিহ্ন সরিয়ে দিয়েছি, ফিলিস্তিন সম্পর্কিত কোনো পোস্টে লাইক বা প্রতিক্রিয়া দিতেও ভয় পাচ্ছি। এমনকি গাজায় বেনামে দান করতেও ভয় লাগে এখন।"
তিনি আরও বলেন, "যাদের গ্রেফতার ও বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের অনেকেরই গ্রিনকার্ড ছিল। তাদের তুলনায় আমি একদমই নগণ্য। আমি মনে করি, এটি শুধুই ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা যতই আইন মেনে চলি না কেন আমাদের মধ্যে যেকেউ এর ভুক্তভোগী হতে পারে এবং যেকোনো সময় এটি হতে পারে।"
ভার্জিনিয়ার আরেক শিক্ষার্থী জানান, যদিও তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সীমিত। তারপরও কী ফলো করছেন বা বার্তা পাঠানো সব ক্ষেত্রেই তিনি সাবধানতা অবলম্বন করছেন। কারণ বর্ডারে কাস্টমস কর্মকর্তারা ফোন চেক করছে বলে শোনা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, "আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবাদে অংশ নেওয়া একদমই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।"
নিউ ইয়র্কের এক শিক্ষার্থী সরাসরি বার্তায় জানান, "আমি একদমই নিরাপদ অনুভব করি না। সত্যি বলতে, আমি এখন এই বিষয় নিয়ে কোনো বার্তা পাঠানোর অ্যাপেও কথা বলতে স্বস্তি বোধ করি না।"
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কানিজ সুপ্রিয়া।
অনুবাদ: সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ