Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে

বাইজি আসরে বখশিস গ্রহণ ও বণ্টনের কাজও চৌধরিয়াঁর দায়িত্ব ছিল। দর্শকরা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হন, সেটাও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে

ফিচার

সালেহ শফিক
26 March, 2025, 10:30 pm
Last modified: 26 March, 2025, 10:37 pm

Related News

  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 
  • ঢাকাসহ ৯ জেলায় বজ্রঝড়ের সতর্কবার্তা: বিএমডি
  • রাজধানীতে অহেতুক সড়ক অবরোধ না করতে ডিএমপির অনুরোধ
  • এয়ারপোর্টে নাচতে গিয়ে ফ্লাইট মিস, সেই নাচই এখন টিকটকে ট্রেন্ড 
  • ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের রুল

সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে

বাইজি আসরে বখশিস গ্রহণ ও বণ্টনের কাজও চৌধরিয়াঁর দায়িত্ব ছিল। দর্শকরা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হন, সেটাও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সালেহ শফিক
26 March, 2025, 10:30 pm
Last modified: 26 March, 2025, 10:37 pm
মেহফিলে নৃত্যগীতরত বাইজি। চিত্রশিল্পী: অনুপ গোমে

পাটুয়াটুলির ৩৮/২ বাড়িটি এখন বহুতল নূর মার্কেট। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ নূরু মিয়া জায়গাটি কিনে নেন। তার নামেই তৈরি হয় নূর মার্কেট। থ্রি পিস, শাড়ি ও বোরখার শতাধিক দোকান আছে এ মার্কেটে। তবে বয়স্ক দু-একজন ছাড়া বেশি কেউ জানে না যে, এখানে একসময় ছিল গঙ্গাজলি—ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত বাইজিবাড়ি।

গঙ্গাজলি ছিল দুই তলা। ওপরতলায় ছিল ১৫টি কামরা, আর নিচতলায় ছিল নান্দুর পানের দোকান। বাজনদার, সফরদার, বডিগার্ড আর দালালরাও থাকত নাচতলাতেই। উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে দেশভাগের আগে পর্যন্ত ঢাকার অন্যতম নামকরা বাইজিবাড়ি ছিল এটি।

বাইজিদের ওঠাবসা ছিল রাজা-মহারাজাদের সঙ্গে

বাইজিরা ছিলেন সুরুচিসম্পন্ন। আচার-আচরণ ও সোহবত শেখার জন্য সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েদের বাইজিবাড়িতে পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। যেহেতু তাদের ওঠাবসা ছিল রাজা, মহারাজা, নবাবদের সঙ্গে, তাই আদব-লেহাজ শেখা ছিল জরুরি। ছোটবেলা থেকেই বসাক ও মুসলমান ওস্তাদরা তাদের সংগীত, নৃত্য, আদব-লেহাজ শেখাতেন। পরে তারাই আবার সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

ঢাকায় তখন বাইজির সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর ছাড়া জিন্দাবাহার লেনেও ছিল বেশ কয়েকটি বাইজিকোঠা। তবে নামযশের দিক থেকে গঙ্গাজলি ছিল সবার ওপরে। বড় বড় বাবুদের প্রথম পছন্দ ছিল এটি। কারণ এখানে প্রায়শই নতুন নতুন বাঈদের আগমন ঘটত আগ্রা, দিল্লি, লক্ষ্নৌ বা বেনারস থেকে।

'ঢাকার বাইজিদের ইতিবৃত্ত' গ্রন্থের লেখক শিশির সমতটী গঙ্গাজলির কথা জানতে পারেন নাট্যকার সাঈদ আহমদের (১৯৩১-২০১০) বই থেকে। সাঈদ আহমদ গঙ্গাজলির ভরপুর সময় প্রত্যক্ষ করেছেন এবং নিজের দেখা অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

নওয়াবিন বাই। ছবি কৃতজ্ঞতা: ওয়াকার এ খান

ঢাকায় বাইজিদের আগমন শুরু হয় ইসলাম খাঁর আমলে। সে অর্থে এটি চারশ বছরের পুরোনো সংস্কৃতি। তবে বাইজি সংস্কৃতির প্রসার ঘটে ১৮৫৭ সালের পর। সংগীতচর্চায় ঢাকার নামযশ ছিল আগে থেকেই, যা বাইজিদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছিল। নান্দুকেও বেনারস থেকে নিয়ে এসেছিল বাইজিরা। কারণ নান্দুর হাতে ছিল মধু—তার সাচি পান যে খেত, সে ভুলতে পারত না। নান্দু ছিল মিষ্টভাষী। বেনারসী, উত্তরভারতীয় আর ঢাকাই ভাষা মিলিয়ে সে যা বলত, তাতে না হেসে পারত না কেউ। একাই সামলাতে পারত না বলে নিজের ভাই আর ভাতিজাকেও বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল নান্দুরাম।

নান্দুর পান—স্বাদ ও সুগন্ধের অনন্য মিশ্রণ

নান্দু ছিল ব্যাচেলর, বিয়ে করেনি। তার ভাই-ভাতিজারা সাচি ও বাংলা পানে চুন, খয়ের লাগাত। নান্দু এতে যোগ করত নানান সুগন্ধি—গোলাপের পানি, কেওরার পানি, জাফরান, কিমাম, জর্দা ইত্যাদি। শেষে তবকে মুড়িয়ে তা পরিবেশন করত। সে পানের স্বাদ যেমন ছিল অনন্য, তেমনি ছিল সুগন্ধিও।

দোতলা প্রশস্ত বাড়ি গঙ্গাজলির বাঁকানো সিঁড়ি বেয়ে যখন বাবুরা নান্দুর পান খেতে খেতে ও শিস বাজাতে বাজাতে উঠতেন, তখন সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ত চারধারে। বাড়ির বারান্দায় ছিল ইজিচেয়ার আর বেতের মোড়া। গঙ্গাজলি থেকে অল্প দূরে শাখারীবাজারের মোড়ে কোতোয়ালি থানার গা ঘেঁষে যে ফুলের হাট বসত, সেখান থেকে সুন্দর ফুলের তোড়া কিনে বাবুরা, সাহেবরা নান্দুর পান মুখে দিয়ে ঢুকত গঙ্গাজলিতে। এতে বোঝা যায়, বাইজিরা ফুল খুব ভালোবাসত। আসলে, ফুলের সৌরভ আর আতরের সুবাস ছাড়া বাইজি আসর জমত না। গঙ্গাজলির পাশেই ছিল কালীবাড়ি। সেকালে দেখা যেত, যেখানে বাইজিদের কোঠাবাড়ি, সেখানেই থাকত একটি মন্দির।

সকালে গঙ্গাস্নান ছিল নিয়ম

গঙ্গাজলি থেকে বুড়িগঙ্গা ছিল একশ-দেড়শ গজ দূরে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাইজিদের প্রথম কাজ ছিল বুড়িগঙ্গায় স্নান করা। পূর্বদিকে মুখ করে মন্ত্রপাঠ শেষে গোসল সেরে নিত। তারপর গামছা জড়িয়ে পথের মাঝখান দিয়ে সারি বেঁধে হেঁটে যেত। এ দৃশ্য দেখার জন্য রাস্তার দু'ধারে ভিড় জমে যেত।

সাঈদ আহমদ ছিলেন পাটুয়াটুলির পাশ্ববর্তী এলাকা আশেক জমাদার লেনের বাসিন্দা। তিনি 'জীবনের সাত রং' নামে একটি অনবদ্য স্মৃতিকথা লিখেছেন। তার স্মৃতিকথায় পাওয়া যায়, মহেশ ভট্টাচার্য অ্যান্ড সন্স ছিল এক নামকরা দোকান। এ দোকান থেকে সোজাসুজি তাকালে যে বাড়িটি নজরে পড়ত, সেটিই গঙ্গাজলি।

এ পথ দিয়েই বুঝি স্নানে যেত বাইজিরা! ছবি: টিবিএস

সংগীতের পুরোনো পীঠস্থান ও আভিজাত্যের জন্য উপমহাদেশের বিখ্যাত সব বাইজির কাছে ঢাকার আলাদা গুরুত্ব ছিল। তারা গঙ্গাজলিতে আসতেন এবং কিছুদিন থেকে আবার চলে যেতেন।

'আমরা সন্ধ্যা হলেই ওদের গানের রেওয়াজ শুনতাম। সন্ধ্যা ঘনালেই গান-বাজনা শুরু হত। ঠুমরি আর দাদরায় গুলজার হত গঙ্গাজলি। দিনের বেলায় চলত রেওয়াজ। বাইজিদের খাস কামরা খুব শান-শওকতে সাজানো থাকত। ঘরে বিছানো থাকত ফরাশ, তার ওপর তাকিয়া-বালিশ, তাজা ফুল, ছিলিমওয়ালা হুকা, আতর, গোলাপ এবং আরও কত কী!'

শিশির সমতটীর দীর্ঘদিনের গবেষণার ফসল 'ঢাকার বাইজিদের ইতিবৃত্ত'। তথ্যসমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট এ বইটির একটি অধ্যায় গঙ্গাজলি বাইজিবাড়ি নিয়ে। শিশির জানতে পারেন যে, সাঈদ আহমদ একসময় গঙ্গাজলির উজ্জ্বল সময় প্রত্যক্ষ করেছেন।

তিনি বলেছিলেন, 'ভোরবেলায় বুড়িগঙ্গায় স্নান না করে বাইজিরা আহার করত না। প্রতিদিন ভোরে গঙ্গাজলি থেকে তারা লাইন ধরে গোসলের জন্য বুড়িগঙ্গায় যেত। মহেশ ভট্টাচার্যের দোকানের সামনে দিয়ে বাকল্যান্ড বাঁধ স্পর্শ করে ওয়াইজঘাটে গিয়ে তারা গোসল করত। গোসল সেরে বুকে গামছা জড়িয়ে এবং হাতে পিতলের ছোট কলসি নিয়ে সিক্ত ভূষণে আবার সারি বেঁধে ফিরত। এ দৃশ্য উপভোগ করতে ছেলেবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ওয়াইজঘাট এলাকায় যেতাম।'

শিশির বলেছিলেন, 'শুধু গঙ্গাজলি নিয়েই একটি আলাদা বই লেখা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে তথ্যের বড় অভাব। নান্দুরামের মতো একটি চরিত্র এভাবে হারিয়ে যাবে, ভাবতেই কষ্ট হয়।'

ছয় বছরের গবেষণা

আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভালের প্রথম আসর বসেছিল ২০১২ সালে। শিশির সেখানে শ্রোতা হিসেবেই গিয়েছিলেন। তবে উৎসব চত্বরে ঘুরতে ঘুরতে তিনি কিছু পোস্টার ও ফেস্টুন দেখেছিলেন, যেখানে বাইজিদের ছবি ছিল। সেসঙ্গে ঢাকার শিল্প-সংস্কৃতিতে তাদের অবদানের কথাও লেখা ছিল।

পরিতোষ সেনের আঁকায় বাইজিদের স্নান সেরে ফেরা।

পরের দিন থেকেই শিশির ঢাকার বাইজিদের নিয়ে ভালো গবেষণা গ্রন্থ খুঁজতে শুরু করেন। বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা পেলেও কোনো পূর্ণাঙ্গ বই পাননি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই এ বিষয়ে গবেষণা করবেন এবং বই লিখবেন। ছয় বছর ধরে তিনি গবেষণা চালিয়ে যান।

তার গবেষণার অংশ ছিল বাইজিরা যে বাড়িগুলোয় থাকতেন, সেগুলো ঘুরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর, জিন্দাবাহার, সূত্রাপুর ও নবাবপুরের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া—যার মধ্যে সাঈদ আহমদও ছিলেন। এছাড়া তিনি বহু বই সংগ্রহ ও অধ্যয়ন করেন।

শিশির বলেন, 'এমনও মাস গেছে, বেতনের প্রায় সবটাই বই কেনার পেছনে খরচ হয়েছে। বইটিতে সাড়ে ষোলোশো সূত্র (রেফারেন্স) দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইজিদের নিয়ে যত বই, নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও স্মৃতিচারণের খোঁজ পেয়েছি, সবই সংগ্রহ করেছি। এতে সংগ্রহ এত সমৃদ্ধ হয়েছে যে, আরও দুটি বই লেখার রসদ পেয়েছি। সামনে ঢাকার বাবুদের নিয়ে একটি বই লেখার পরিকল্পনা আছে।'

গঙ্গাজলিতে 'পাগলার গেলাসি'

গঙ্গাজলি নামটি 'গঙ্গাজল' থেকে এসেছে বলে অনুমান করেছিলেন সাঈদ আহমদ। কারণ, গঙ্গাজল পবিত্র এবং বাইজিরাও নিজেদের পবিত্র মনে করতেন। গঙ্গাজলের আরেকটি ব্যাখ্যা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে—হিন্দু রমণীদের সখ্যসূচক সম্পর্কের নাম 'গঙ্গাজল'। সাধারণত মেয়েদের মধ্যে এ 'সই' বা 'গঙ্গাজল পাতানোর' উৎসব হয়। গঙ্গাজলিতে যেহেতু একসঙ্গে অনেক বাইজি থাকতেন, তাই তাদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক না থাকলে এটি সম্ভব হতো না। তাই গঙ্গাজলি নামটির উৎপত্তি এখান থেকেও হতে পারে।

শিশির সমতটী লিখেছেন, 'পাগলার গেলাসির' কথা না বললে গঙ্গাজলি সম্পর্কে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এটি ছিল লায়ন থিয়েটারের পাশে আশেক লেনে। খাসির মাংস দিয়ে তৈরি এ বিশেষ খাবারটি তৈরি করত এক পাগলাটে স্বভাবের রাঁধুনি। তার বাবা ছিলেন জনৈক থমসন সাহেবের কুক। তাদের পরিবার বংশপরম্পরায় কুকের কাজ করত।

গঙ্গাজলি আজ বহুতল ভবন নূর মার্কেট। ছবি: টিবিএস

পাগলার গেলাসি মুখে দিলেই গলে যেত, স্বাদ ছিল অনন্য। গঙ্গাজলির বাইজি ও বাবুদের প্রিয় খাবারের মধ্যে এটি অন্যতম ছিল।

হাসন রাজার ছেলে গণিউর রাজার বর্ণনা থেকে (১৮৯০-এর দশক) জানা যায়, বাইজিরা সাধারণত উর্দু, ফারসি অথবা বাংলায় গান গাইতেন। বাইজিবাড়িতে মাদকদ্রব্যের সরবরাহ থাকত, যার মধ্যে গাঁজা ও চরসও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতিথিদের স্বাগত জানাতে পান পরিবেশন করা হতো। বাইজি আসরে যাওয়াকে 'ভিজিট' বলা হতো।

চৌধরিয়াঁ, মাসি, ও বডিগার্ড

বাইজিবাড়ির প্রধান বাইজিকে বলা হতো 'চৌধরিয়াঁ'। বাবুদের সঙ্গে দরকষাকষি, কোঠার সার্বিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি চৌধরিয়াঁর হাতে থাকত। সাধারণত যিনি চৌধরিয়াঁ হতেন, তার প্রচুর সম্পত্তিও থাকত।

বাইজি আসরে বখশিস গ্রহণ ও বণ্টনের কাজও চৌধরিয়াঁর দায়িত্ব ছিল। দর্শকরা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হন, সেটাও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

তবে চৌধরিয়াঁকে 'মাসি' বা 'বৃদ্ধা বাইজি'দের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। মাসিরা সাধারণত বিগতযৌবনা বাইজিরা ছিলেন, যারা নতুনদের শিক্ষা দিতেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সমৃদ্ধ করতেন।

এছাড়া ছিল দালাল, যারা বাইজিদের পরিচিত করানোর [মার্কেটিং] কাজ করত। একজন বাইজিকে সাধারণ দর্শক-শ্রোতার কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে দালালরা ভূমিকা রাখত এবং বিনিময়ে তাদের উপার্জনের একটি অংশ নিত।

ওয়াইজঘাটে স্নান করা ছিল বাইজিদের দিনের প্রথম কাজ। ছবি: টিবিএস

বাইজিদের নিজেদের পোষা গুণ্ডা বা বডিগার্ড থাকত। কোনো বাইজি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তাকে পাওয়ার জন্য রাজা, মহারাজা ও নবাবরা প্রতিযোগিতায় নামত, যা কখনো কখনো মারামারি পর্যন্ত গড়াত।

কোনো কোনো ভক্ত প্রেমিক বনে গিয়ে এমন আচরণ করত যে, তাকে না তাড়ালে চলত না। এছাড়া বাইজিদের মধ্যেও পারস্পরিক রেষারেষি ছিল। এসব সামাল দেওয়ার দায়িত্ব থাকত তাদের বডিগার্ডদের ওপর।

সফরদার নামে আরেকটি পেশাজীবী দল ছিল বাইজি সংস্কৃতিতে। এরা ছিল ফুলবাবু। তারা পাঞ্জাবির ওপর ভেলভেটের ওয়েস্ট কোট ও ভেলভেটের কিশতি টুপি পরে ফিটফাট থাকত, যেন বাবুরা তাদের দেখে বুঝতে পারেন যে, তারা যে বাইজির হয়ে কাজ করছে, সেও অত্যন্ত রুচিশীল।

বাইজি আসর কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নির্ভর করত আয়োজনের ধরন ও স্থানের ওপর। রঙমহল, বাগানবাড়ি, রাজদরবার, রাজপ্রাসাদ, বিয়েবাড়ি, পূজার উৎসব বা বজরায় হলে এক ধরনের আয়োজন হতো, আর বাইজির নিজস্ব গৃহে হলে ভিন্ন আয়োজন থাকত।

শিশির সমতটী লিখেছেন, মুঘল আমলের নিয়ম-প্রথার সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের যথেষ্ট পার্থক্য ছিল।

আকবরের আমলের নিয়মনীতি

সম্রাট আকবরের আমলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি আরোপ করা হয়েছিল। যেমন, কোনো বাইজি তার মুখমণ্ডল, হাত ও পা ছাড়া দেহের অন্য কোনো অংশ প্রদর্শন করতে পারত না।

শিশির সমতটীর বই ‘ঢাকার বাঈজীদের ইতিবৃত্ত’-এর প্রচ্ছদ। ছবি: টিবিএস

নৃত্যরত অবস্থায় পা উঁচু করা নিষিদ্ধ ছিল। লাফ দেওয়াও বারণ ছিল। কোনো পুরুষের দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকানো কিংবা দৃষ্টি বিনিময় করা নিষিদ্ধ ছিল। পারত না পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতে। পরিবেশনার সময় বসা, দাঁড়ানো ও ওঠার ক্ষেত্রেও কঠোর নিয়ম পালন করতে হতো।

নৃত্য পরিবেশনার জন্য বাইজিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ১৬৫৮ সালে আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় এসে মুঘল দরবারে নাচ ও গানের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। ফলে সংগীতশিল্পী, নর্তকী ও বাইজিরা জীবিকার তাগিদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েন।

বিভিন্ন ছোট-বড় রাজ্যের দরবারে অনেকের ঠাঁই হয়। জমিদার ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাইজি সংস্কৃতি নতুন রূপ লাভ করে। কোঠাবাড়িকেন্দ্রিক বাইজি সংগীতচর্চা নতুন দিগন্তের সূচনা করে।

এসব কোঠাবাড়ি চেষ্টা করত, সেরা বাইজিদের রাখার জন্য। তাদের কোঠা সাজানো হতো অপরূপ শৈলীতে। পাশাপাশি, বাইজিদের তাল দেওয়ার জন্য 'গাইয়ে পাখি' সংগ্রহের রীতিও প্রচলিত ছিল।

ভোজনবিলাসী বাইজিরা

শিশির সমতটী বাইজিদের ভোজনবিলাসিতা নিয়েও লিখেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, তারা ছিলেন বহুজনের স্বপ্নের রানী। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল।

যেহেতু বাইজিরা গানের পাশাপাশি নাচও করতেন, তাই তাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা জরুরি ছিল। একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পীর প্রধান শর্তই হলো সুগঠিত শরীর। বাইজিরা এ নিয়ম মেনে চলতেন, তবে বর্তমান যুগের নায়িকাদের মতো না খেয়ে থাকার পক্ষপাতী ছিলেন না। বরং অধিকাংশ বাইজি ছিলেন ভোজনরসিক।

সম্ভবত এখানেই ছিল নান্দুর পানের দোকান। ছবি: টিবিএস

তারা দীর্ঘসময় ধরে নাচ ও গান করতেন, তাই সহজেই ক্যালোরি ক্ষয় হতো। এরা নিজেরা বড় খাইয়ে ছিলেন, অন্যদের খাওয়াতেও ভালোবাসতেন। খাদ্য গ্রহণের ফলে তাদের দেহে বল, স্বাস্থ্য ও কণ্ঠের জোর বজায় থাকত। কণ্ঠশক্তি ছাড়া সংগীত পরিবেশন করা সম্ভব ছিল না।

রসূলান বাঈয়ের প্রসঙ্গে বলা হয়, আহমেদাবাদে থাকাকালীন তিনি সকালে নাস্তা হিসেবে খেতেন মোটা মোটা ২৫-৩০টি পুরি, সঙ্গে হালুয়া, বড় দুই গ্লাস দুধ, মিষ্টি, দুই গ্লাস চা ও পান। খাওয়াটাই ছিল তাদের প্রধান বিলাসিতা।

আলোকচিত্রের বদৌলতে আমরা কিছু স্থূলকায় বাইজির ছবি দেখতে পাই, যারা শুধু গাইতেন, নাচতেন না। হাকিম হাবিবুর রহমানের বর্ণনায় পাওয়া যায় এলাহিজানের কথা। এলাহিজান ছিলেন অত্যন্ত লম্বা ও স্থূলকায়। ১৮৯০ সালে নবাববাড়ির এক নববর্ষ উৎসবে শাহবাগের গোলপুকুরের মাঝের মঞ্চে নাচগান করার সময় মঞ্চ ভেঙে পড়ে গিয়েছিলেন।

হারিয়ে গেছে দেশভাগের পর

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাইজিদের জীবনেও পরিবর্তন আসে। গঙ্গাজলি নামক বিখ্যাত বাইজিবাড়ি পরিণত হয় গণিকালয়ে। দেশভাগের পর তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন।

সাহিত্যিক সাইদ আহমদের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, নান্দুরামের পানের দোকান, গঙ্গাজলি বা পাশের কালিমন্দির আর নেই। পাটুয়াটুলি লেনের ৩৮ নম্বর ঠিকানায় এখন বহুতলবিশিষ্ট শাড়ি ও কাপড়ের পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র 'নূর সুপার মার্কেট'।

যেখানে একসময় গঙ্গাজলি নামে বাইজিদের দ্বিতল ভবন ছিল, আজ তা অনেকের কাছেই অজানা।

Related Topics

টপ নিউজ

বাইজি / গঙ্গাজলি / ঢাকার ইতিহাস / ঢাকার অতীত / ঢাকা / নৃত্যশিল্পী / নাচ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ব্যাহত নেটওয়ার্ক সেবা
  • ২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি
  • উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ
  • মার্কিন ভিসায় সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ অনুমোদিত নয়: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস
  • একটি লোক নির্বাচন চান না, সেটা হচ্ছে ড. ইউনূস: মির্জা আব্বাস
  • সব দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা

Related News

  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 
  • ঢাকাসহ ৯ জেলায় বজ্রঝড়ের সতর্কবার্তা: বিএমডি
  • রাজধানীতে অহেতুক সড়ক অবরোধ না করতে ডিএমপির অনুরোধ
  • এয়ারপোর্টে নাচতে গিয়ে ফ্লাইট মিস, সেই নাচই এখন টিকটকে ট্রেন্ড 
  • ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের রুল

Most Read

1
বাংলাদেশ

৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ব্যাহত নেটওয়ার্ক সেবা

2
আন্তর্জাতিক

২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি

3
বাংলাদেশ

উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ

4
বাংলাদেশ

মার্কিন ভিসায় সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ অনুমোদিত নয়: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস

5
বাংলাদেশ

একটি লোক নির্বাচন চান না, সেটা হচ্ছে ড. ইউনূস: মির্জা আব্বাস

6
বাংলাদেশ

সব দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab