‘মোগল-এ-আজম’, ‘উমরাও জান’ থেকে ‘পদ্মাবত’; যেভাবে বলিউড কস্টিউমের জাদুতে জীবন্ত হয়ে ওঠে একেকটি যুগ

বলিউডের চলচ্চিত্র শুধু গল্পই বলে না, বরং এর পোশাক এবং নির্দিষ্ট কস্টিউম দর্শকদের টেনে নিয়ে যায় ইতিহাসের নানান বাঁকে, জীবন্ত করে তোলে অতীতকে। রাজকীয় আভিজাত্য থেকে শুরু করে সাধারণ জীবনের প্রতিচ্ছবি, প্রতিটি পোশাক যেন কথা বলে ওঠে, এক নিমেষে দর্শকদের পৌঁছে দেয় অচেনা কোনো সময়ে।
কীভাবে বলিউডের কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো পোশাকের মাধ্যমে একেকটি যুগকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে, তা এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক:
যেমন, কালজয়ী ''মোগল-এ-আজম'-এর কথা ভাবুন। এই ছবি মুঘল দরবারের অবিশ্বাস্য জাঁকজমক, সূক্ষ্ম কারুকাজ, মনোরম ড্র্যাপারি এবং বিশদ অনুষঙ্গ ডিজাইনের মাধ্যমে সেই সময়ের পরিশীলিত জীবনধারাকে পর্দায় সফলভাবে তুলে ধরেছিল। আনারকলির মনোহর, হালকা কাপড়ের পোশাক, তা রাজকীয় পোশাকের গুরুগম্ভীরতার বিপরীতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিল। পোশাকগুলি চরিত্রগুলোর সামাজিক অবস্থানকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সে সময়ের প্রেম, রাজনীতি এবং বিদ্রোহের কাহিনিকে আরও গভীর অর্থ দিয়েছে।

একইভাবে, 'উমরাও জান' যেন ঊনবিংশ শতাব্দীর লখনউয়ের কমনীয়তা, নারীত্ব এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি। বাঈজিদের জাঁকজমকপূর্ণ লেহেঙ্গা, গরারা আর হিরে-মুক্তোর গহনা যেন সে সময়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার প্রতীক। হালকা প্যাস্টেল রং, সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারির জমিন এবং পোশাকের মোলায়েম স্বচ্ছতা কেবল চরিত্রদের মার্জিত চলনকেই নয়, জীবনের দুঃখ-কষ্টকেও ফুটিয়ে তুলেছে নিপুণভাবে।
অন্যদিকে, 'যোধা আকবর' রং এবং পোশাকের এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী, যা সংলাপের মতোই ইতিহাসকে নিপুণভাবে বলে চলে। ভারী এমব্রয়ডারি করা লেহেঙ্গা, রাজকীয় পাগড়ি আর ঝলমলে গহনা রাজপুত ও মুঘল পোশাকের গৌরবকে মহিমান্বিত করেছে। প্রতিটি পোশাক রাজনৈতিক জোট, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আনুষ্ঠানিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, দর্শকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেই সময়ের আভিজাত্য ও শিষ্টাচারের বিলাসবহুল জগতে।

'বাজিরাও মাস্তানি' ছবিতেও পোশাক ঐতিহাসিক বাস্তবতা এবং সিনেম্যাটিক কল্পনার এক চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটে। বাজিরাওয়ের যোদ্ধা পোশাকের তেজ, মাস্তানির লেহেঙ্গার আভিজাত্য এবং কাশিবাঈয়ের মিনিমালিস্টিক পোশাক—এ সবই পদমর্যাদা, ক্ষমতা এবং আঞ্চলিকতার প্রকাশ। পোশাকের রঙের প্যালেট, ওয়াইন ও রুপালি এমব্রয়ডারি এবং আঞ্চলিকভাবে পোশাক পরার ধরণ ছবির কাল ও স্থানকে দারুণভাবে তুলে ধরেছে, গল্পের আবেগঘন প্রকৃতিকে আরও তীব্র করেছে।

আর সাম্প্রতিক সময়ে 'পদ্মাবত'-এর পোশাকগুলো যেন কেবল পরিধেয় বস্ত্র নয়, বরং রাজকীয়তা, বীরত্ব এবং সাংস্কৃতিক গর্বেরও বাহক। রানি পদ্মাবতীর পোশাকে ব্যবহৃত সমৃদ্ধ ও বিলাসবহুল সিল্ক, জারদৌসি কাজ এবং প্রাণবন্ত রঙের ছোঁয়া ছিল মনোমুগ্ধকর। এর বিপরীতে আলাউদ্দিন খিলজির পোশাকে ছিল ক্ষমতা ও ভয়ের এক ভিন্ন প্রকাশ, যা তার চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছিল কাপড়ের ধরণ, রং এবং মার্জিত খুঁটিনাটির মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মধ্যযুগীয় ভারতের জাঁকজমকপূর্ণ অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে নিবিড় ঐতিহাসিক গবেষণা, শৈল্পিক উপস্থাপনা এবং সিনেম্যাটিক নাটকীয়তা স্মরণীয় ভিজ্যুয়াল চরিত্র তৈরি করেছে।
এভাবেই বলিউড তার পোশাক ডিজাইনের নিপুণতায় প্রতিটি যুগকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলে। কেবল গল্প বলা নয়, পোশাকের মাধ্যমে দর্শকদের এক কাল থেকে অন্য কালে ভ্রমণের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়, যা দীর্ঘকাল মনে গেঁথে থাকে।