বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড; প্রতি আউন্সের মূল্য ৪,০০০ ডলার ছাড়াল

বুধবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলার অতিক্রম করেছে, যা নতুন রেকর্ড। এটি মূলত বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝোঁক এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যৎ সুদের হার কমানোর প্রত্যাশার কারণে ঘটেছে।
বর্তমানে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে ৪ হাজার ২ ডলারে পৌঁছেছে। আগামী ডেলিভারির জন্য স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৫ ডলারে। গত বছর স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছিল। আর চলতি বছরে ইতোমধ্যেই সেটি ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বতন্ত্র ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওয়ং বলেছেন, "এ মুহূর্তে স্বর্ণের প্রতি এতটা বিশ্বাস যে বাজার এবার পরবর্তী বড় মাইলফলক আউন্সপ্রতি ৫,০০০ ডলারের দিকে তাকাচ্ছে, বিশেষ করে যখন ফেড সুদের হার আরও কমানোর দিকে যেতে পারে।"
তিনি আরও বলেছেন, "মধ্যপ্রাচ্য বা ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি হলেও কিছু ওঠানামা থাকতে পারে। কিন্তু মূল কারণগুলো— বৃহৎ ও বাড়তে থাকা ঋণ, রিজার্ভ বৈচিত্র্য এবং দুর্বল ডলার— মধ্যমেয়াদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।"
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি 'শাটডাউন' এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে। আর এতেই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন ফেডের সুদের হার কমানোর সময় ও মাত্রা বোঝার জন্য সরকারি তথ্যের বদলে বেসরকারি উৎসের ওপর নির্ভর করছেন।
ফ্রান্স ও জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান থাকায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
এদিকে স্বর্ণের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামও বেড়েছে। রূপার দাম এখন ৪৮ ডলার, প্লাটিনামের ১ হাজার ৬৫৩ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের ১ হাজার ৩৫৫ ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
যেভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করা হয়
স্পট মার্কেট
বড় ক্রেতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি স্বর্ণ কেনেন। এই বাজারে দাম নির্ধারিত হয় সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। লন্ডন স্পট স্বর্ণবাজারের কেন্দ্র, যেখানে লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন লেনদেনের মান ও নিয়ম নির্ধারণ করে। চীন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রও বড় স্বর্ণবাজার হিসেবে পরিচিত।
ফিউচার্স মার্কেট
অনেক বিনিয়োগকারী ভবিষ্যতের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট দামে স্বর্ণ কেনা-বেচার চুক্তি করেন, যাকে ফিউচার্স বলা হয়। নিউইয়র্কের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ইনকরপোরেটেড (কমেক্স) বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ ফিউচার্স বাজার। এছাড়া চীনের সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ ও জাপানের টোকিও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (টোকম) এ ধরনের লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড প্রোডাক্টস
এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডস (ইটিএফ) বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দামের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেয়, যদিও তারা বাস্তবে স্বর্ণ হাতে পান না। ২০২৪ সালে স্বর্ণ-সমর্থিত ইটিএফগুলোতে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার নিট প্রবাহ দেখা যায়, যা চার বছরে প্রথমবারের মতো বৃদ্ধি।
বার ও মুদ্রা
সাধারণ ক্রেতারা দোকান বা অনলাইনে স্বর্ণের বার ও মুদ্রা কিনতে পারেন। এগুলো বাস্তব স্বর্ণে বিনিয়োগের সবচেয়ে সহজ উপায়।