জীবদ্দশায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ!

ভ্যান গখের আঁকা চিত্রকর্মের দিকে তাকিয়ে কখনো কি মনে হয়েছে—ইশ! এমন একটা ছবি যদি নিজের সংগ্রহে থাকত! কিন্তু সেটা এখন কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ এই শিল্পীর কাজ এখন এতটাই দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান যে কোটিপতিরাও এগুলো সহজে কিনতে পারেন না। নিলামে এসব চিত্রকর্ম খুব কমই ওঠে।
তবে ভ্যান গখের ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল পুরোপুরি উলটো। মাত্র দশ বছরের চিত্রজীবনে তিনি ছিলেন প্রায় অচেনা এক শিল্পী। দারিদ্র্যের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পুরো জীবনে তিনি বিক্রি করতে পেরেছিলেন মাত্র একটি চিত্রকর্ম—সেটাও 'বিক্রি' শব্দটির সংজ্ঞা একটু ঢিলেঢালা ধরলে।
চিত্রটির নাম 'দ্য রেড ভিনেয়ার্ড'—বাংলায় 'লাল আঙ্গুরক্ষেত'। ১৮৮৮ সালের ২৮ অক্টোবর, ফ্রান্সের আর্ল নামের এক শহরের কাছে হাঁটতে বেরিয়ে ভ্যান গখ এই দৃশ্যটি দেখেছিলেন তার বন্ধু পল গগ্যাঁর সঙ্গে। সে সময়ই মনে ধরেছিল লালচে আলোয় ঝলমল করা আঙ্গুরক্ষেতের রঙ ও সৌন্দর্য।
দ্য আর্ট নিউজপেপার-এর মার্টিন বেইলি লিখেছেন, সাধারণত ফ্রান্সের প্রোভঁস অঞ্চলে সেপ্টেম্বরেই আঙ্গুর তোলা শেষ হয়। কিন্তু সেই বছর ফসল তোলা একটু দেরিতে শুরু হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। এই কারণেই অক্টোবরের শেষভাগে গখ এমন দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলেন।
ভ্যান গখ পরে তার ভাই থিওকে একটি চিঠিতে সে মুহূর্তের বর্ণনা দেন—'একটা লাল আঙ্গুরক্ষেত, পুরোটা যেন রক্তরঙা মদের মতো লাল। দূরে গিয়ে সেটা হলুদ হয়ে যায়, তারপর এক সবুজ আকাশ যার মাঝে সূর্য। ক্ষেতের মাঝে মাঝে ছিল বেগুনি ও ঝলমলে হলুদ, বৃষ্টির পরে যেখানে সন্ধ্যার সূর্য প্রতিফলিত হচ্ছিল।'
তবে তখনই ছবি আঁকেননি ভ্যান গখ, স্মৃতি থেকে পরে নভেম্বর মাসে ছবিটি আঁকেন।
এরপর চিত্রকর্মটি কিছুদিন থিও'র প্যারিসের অ্যাপার্টমেন্টে টানানো ছিল, পরে ১৮৯০ সালের শুরুতে তিনি তা ফেরত চান, ব্রাসেলসে 'লে ভাঁ' নামের এক শিল্পীদলের বার্ষিক প্রদর্শনীতে পাঠানোর জন্য।
সেই প্রদর্শনী থেকে চিত্রটি কিনে নেন আনা বখ নামের একজন শিল্পী। তিনি ছিলেন ভ্যান গখের পরিচিত শিল্পী ইউজিন বখের বোন। আত্মীয় না হলেও চিত্রটির পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করেছিলেন আনা, আর ভ্যান গখ পরে আফসোস করেছিলেন—'বন্ধুর জন্য তো কিছু ছাড় দিতেই পারতাম!'
তবে আনা বখ ছবিটির জন্য যতই দাম দিয়ে থাকুন না কেন, আজকের দামের তুলনায় তা ছিল একেবারেই নামমাত্র।
ছবিটি পরে এক রুশ সংগ্রাহক কিনে নেন, সেখান থেকে রুশ বিপ্লবের সময় তা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে এটি জনচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়।
পরবর্তীতে ছবিটি প্রদর্শিত হয় মস্কোর পুশকিন স্টেট মিউজিয়ামে। এখনও সেখানেই আছে। তবে এখন চিত্রকর্মটি এতটাই নাজুক ও সংবেদনশীল যে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সেটি ধার দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।