তরুণরা শুধু নিজেরা ভোট দেবেন না, অন্যদেরও উৎসাহিত করবেন: সিইসি
তরুণরা শুধু নিজেরা ভোট দেবেন না, অন্যদের ভোট দিতেও উৎসাহিত করবেন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিন দিনব্যাপী 'জেন ভোট ফেস্টিভ্যাল'-এর শেষ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "তরুণরা শুধু নিজেরা ভোট দেবেন না, অন্যদেরও ভোটদানে উৎসাহ দেবেন। তরুণরা সাহস ও সৃষ্টির প্রতীক। আপনাদের ছাড়া দেশ গড়া সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বচ্ছ।"
গত ১৫ ডিসেম্বর গুলশানের আলোকি কনভেনশন হলে তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের শেষ দিন অনুষ্ঠিত হয়। শেষ দিনে ছিল মক ভোটিং বা ভোট দেওয়ার অনুশীলন। এর আগে প্রথম দুই দিন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনভিত্তিক হ্যাকাথন, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন ধারণা উপস্থাপন করেন। শেষ দিনে আলোচনা ও মক ভোটিংয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
'মার্কা দেখে নয়, যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট'—এই বার্তাই উঠে আসে 'জেন ভোট ফেস্টিভ্যাল' থেকে। তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ উৎসবে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও নাগরিক দায়িত্ব নিয়ে নানা কার্যক্রম ছিল।
উৎসবের শেষ দিনে সোমবার সারাদিনব্যাপী উন্মুক্ত মক ভোটিং বুথ ছিল অন্যতম আকর্ষণ। এখানে তরুণ ও নতুন ভোটাররা হাতে-কলমে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।
ভোটাররা প্রথমে বুথে গিয়ে নির্ধারিত নম্বর দেখিয়ে ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করেন। এরপর সারিবদ্ধভাবে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে গোপন বুথে জাতীয় নির্বাচনের ভোট ও গণভোট—দুটি স্লিপে ভোট দেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ।
রংপুরের ভোটার এবং বর্তমানে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারিফুজ্জামান সরিফ বলেন, "আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ঠিক থাকে, ভোটের সময় যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারি। আমি মনে করি, এবার একটি ভালো ভোট হবে।"
মক ভোট দেওয়ার পর রোকসানা ফেরদৌস বলেন, "এই প্রথম আমি ভোটার হয়েছি। এখানে প্রথম ভোট দিলাম—এটা আমার জন্য বড় অভিজ্ঞতা। এখানে যেমন নির্ভয়ে ভোট দিলাম, জাতীয় নির্বাচনে এভাবেই উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে চাই। নির্ধারিত কোনো দলের প্রতীক নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দেব। যোগ্য ব্যক্তি সংসদ সদস্য হলে সেটাই দেশের জন্য ভালো।"
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া তরুণরা লিখিতভাবে তাদের মতামত তুলে ধরেন। দেয়ালে স্টিকার দিয়ে সেগুলো টানানো হয়। সেখানে লেখা ছিল— "আমার ভোট, আমি দেব; তবে অবশ্যই যোগ্য ব্যক্তিকেই দেব", "My Vote, My Right", "I want to provide political leadership", "দলীয় স্বার্থের আগে দেশের স্বার্থ", "মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে খবর প্রচার করতে হবে", "Time to vote"।
রাঙামাটির ভোটার তুনি চাকমা বলেন, "আমরা আশা করছি এবার সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হবে। আমি আমার এলাকার প্রার্থী দেখে ভোট দেব। আমার চাওয়া নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে যেন ভোট দিতে পারি। এবার জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও হবে। তাই নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো, গ্রাম পর্যায়েও যেন এমন মক ভোটের আয়োজন করা হয়। এতে জনসচেতনতা বাড়বে।"
মক ভোটে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাহিদ হাসান। তিনি টিবিএসকে বলেন, "নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পরিচালনা ও ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা সম্ভব।"
তরুণদের নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে 'জেন ভোট ফেস্টিভ্যাল' আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস)। এতে সহায়তা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি।
আইএফইএসের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর রুমানা আমিন আরচি টিবিএসকে বলেন, আগামী প্রজন্মের ভোটারদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে 'Educate, Innovate, Engage!' স্লোগানকে সামনে রেখে এ আয়োজন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও সৃজনশীল শিল্পকলার মাধ্যমে তরুণ নাগরিকদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সংযোগ স্থাপনই এ উৎসবের মূল লক্ষ্য।
