জঙ্গি থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী: এক নজরে দেশে পলাতক আসামি ধরতে নগদ পুরস্কারের ইতিহাস
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
এই ঘোষণার ফলে পলাতক আসামি ধরতে নগদ পুরস্কার দেওয়ার চর্চা আবারও আলোচনায় এসেছে। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসী বা জঙ্গি ধরতে এ ধরনের উদ্যোগ নতুন নয়। গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে সহায়তা পেতে কিংবা লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে নগদ পুরস্কার ঘোষণা করে আসছে।
লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার
গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পর থানা ও কারাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। এসব অস্ত্র উদ্ধারে গত ৫ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর সুনির্দিষ্ট তথ্যদাতাদের জন্য নগদ পুরস্কার ঘোষণা করে।
ঘোষণা অনুযায়ী, লুণ্ঠিত একটি লাইট মেশিনগান (এলএমজি) উদ্ধারে ৫ লাখ টাকা, সাব-মেশিনগান (এসএমজি) উদ্ধারে দেড় লাখ টাকা, চায়না রাইফেলের জন্য ১ লাখ টাকা এবং পিস্তল বা শটগানের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি গুলির জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা জানানো হয়। তথ্যদাতাদের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখার নিশ্চয়তাও দেয় পুলিশ।
সাম্প্রতিক যত পুরস্কার
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেন ওরফে 'ছোট সাজ্জাদ'-এর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে নগদ পুরস্কার ঘোষণা করে। পরে ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে।
একই সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) শীর্ষ সন্ত্রাসী 'গ্রেনেড বাবু'সহ আরও সাতজনকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণার কথা জানায়, যদিও নির্দিষ্ট অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সদস্যদের ৫ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার একটি গুঞ্জন ছড়ালেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আনুষ্ঠানিকভাবে এর সত্যতা স্বীকার করেনি।
বিগত সরকারগুলোর আমল
অপরাধী ধরতে নগদ পুরস্কার ঘোষণার রেওয়াজ বহুদিনের। ২০২২ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে—প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্র ও মাদক কারবারে অভিযুক্ত নবী হোসেনের খোঁজ দিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পরে ২০২৪ সালের আগস্টে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৬ সালের আগস্টে নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী এবং আনসার আল ইসলামের নেতা মেজর জিয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশি অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হলেও মেজর জিয়া এখনও পলাতক। এরও আগে, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনতাই হওয়া তিন জঙ্গির প্রত্যেকের জন্য ২ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিএনপি শাসনামলে পুরস্কার
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় থাকা সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, কালা জাহাঙ্গীর, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাসসহ আটজনের জন্য ১ লাখ টাকা করে এবং বাকি ১৫ জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
