দেশের মোট সম্পদের ২৪ শতাংশই শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে
গত এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সম্পদ বৈষম্য এখনও প্রকট এবং অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। প্যারিসভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব-এর প্রকাশিত 'ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৬' অনুযায়ী, দেশের মোট সম্পদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪ শতাংশ) রয়েছে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের হাতে।
৪০টি দেশের আয় ও সম্পদ বণ্টনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদ বৈষম্য অনেক বেশি তীব্র। তবে গত দশকের তুলনায় এই দুটি সূচকই অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
প্রতিবেদনের ফলাফলে আর্থিক ক্ষমতার একপেশে বা কেন্দ্রীভূত চিত্র ফুটে উঠেছে—জনসংখ্যার শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে রয়েছে দেশের মোট সম্পদের প্রায় ৫৮ শতাংশ। এর বিপরীতে, জনসংখ্যার নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে জাতীয় সম্পদের মাত্র ৪.৭ শতাংশ।
আয়ের ব্যবধানও উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে রয়ে গেছে।
শীর্ষ ১০ শতাংশ আয়ের মানুষ মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ৪১ শতাংশ উপার্জন করে, যেখানে নিচের ৫০ শতাংশের আয় মাত্র ১৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জনসংখ্যার ওপরের ও নিচের অর্ধেকের মধ্যে আয়ের ব্যবধান সামান্য কমে ২২ থেকে ২১-এ নেমেছে। অর্থাৎ বৈষম্যের সামগ্রিক সূচকগুলো তেমন বদলায়নি।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামগ্রিক বৈষম্যের বিচারে বাংলাদেশকে মাঝারি সারিতে রাখা হয়েছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমতা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতিবেদনে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের অত্যন্ত নিম্ন হারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা মাত্র ২২.৩ শতাংশ। এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘস্থায়ী লিঙ্গ বৈষম্যেরই প্রতিফলন।
ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৬-এ জোর দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আয় ও সম্পদ বণ্টনের ধরনটি অনেকটা অপরিবর্তনশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৩৬.৯ শতাংশ সম্পদ রয়েছে মধ্যম আয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের হাতে, আর শীর্ষ ১০ শতাংশের হাতে রয়েছে ৫৮.৪ শতাংশ সম্পদ।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর মাথাপিছু গড় সম্পদের পরিমাণ ৭ লাখ ২৩ হাজার ২৩৮ ইউরো। প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১৪২ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষ, যারা মোট সম্পদের মাত্র ৪.৭ শতাংশের মালিক, তাদের গড় সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৪২২ ইউরো বা প্রায় ২ লাখ টাকা।
