প্রবেশপথেই বিভ্রান্তি: কীভাবে পৌঁছাবেন ঢাকার বিমানবন্দরে
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। একসময় বিমানবন্দরের ভেতরে নানাধরনের হয়রানিই ছিল মূল অভিযোগ; তবে এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন সমস্যা—বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে দীর্ঘ যানজট এবং দিকনির্দেশনামূলক সাইনেজ পরিষ্কার না থাকায় যাত্রীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনেক যাত্রীই কোন পথ দিয়ে ডিপার্চার টার্মিনালে প্রবেশ করবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে কেউ ভুল করে চলে যান অ্যারাইভাল টার্মিনালে, আবার কেউ ঢুকে পড়েন ডোমেস্টিক টার্মিনালের দিকে।
চলমান নির্মাণকাজ, পর্যাপ্ত ও স্পষ্ট সাইনেজের অভাব এবং কড়া নিরাপত্তা তল্লাশি—সব মিলিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
এর আগে যাত্রীরা লাগেজ পেতে দেরি হওয়া, প্রবাসীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ এবং ফ্লাইট বিলম্ব—এসব নিয়ে বেশি অভিযোগ করতেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, লাগেজ ডেলিভারি এখন আগের চেয়ে দ্রুত হয়। তবুও অনেক যাত্রী এখনও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। প্রতিদিন এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে ১৪০ থেকে ১৫০টি।
প্রবেশদ্বারে যানজট
বিমানবন্দরের প্রবেশগেটেই ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। গত ১৩ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে এয়ারপোর্ট রোড থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল সংযোগ সড়কের প্রবেশপথে দীর্ঘ যানজট দেখা যায়—যদিও সেদিন রাজনৈতিক অবরোধ থাকায় সড়কে গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মীরা প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র যাচাই এবং নিরাপত্তা তল্লাশি চালাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় এই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি চলমান সংস্কারকাজে প্রবেশপথ সরু হয়ে যাওয়ায় একসঙ্গে দুটি গাড়ির বেশি ঢুকতে না পেরে সৃষ্টি হচ্ছে বড় যানজট।
বিমানবন্দরে ভাইকে নিতে এসেছিলেন শাহজাহান। যানজটে পড়ে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, "নারায়ণগঞ্জ থেকে আসতে কোথাও জ্যাম ছিল না, কিন্তু এখানে গেটের সামনে ১৫ মিনিট ধরে আটকে আছি।"
নোয়াখালী থেকে আসা সৌদি আরবগামী এক যাত্রী বলেন, "আমার ফ্লাইট বিকেল ৫টায়। দুপুর ২টার মধ্যে ঢোকার কথা ছিল, এখন ২টা ৩০ বাজে, এখনও গেটেই আটকে আছি।"
লাগেজ ও ওয়েটিং লাউঞ্জ নিয়ে অসন্তোষ
অনেক যাত্রী জানিয়েছেন, আগের তুলনায় বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে আচরণ কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এখনও অসন্তোষ রয়ে গেছে।
সম্প্রতি ভ্রমণবিষয়ক ব্লগার বনি আমিন ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অবতরণের আধাঘণ্টা পরও তিনি লাগেজ পাননি—যদিও কর্তৃপক্ষ লাগেজ ডেলিভারি পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে বলে দাবি করছে।
দূর-দূরান্ত থেকে আগেভাগে এসে পৌঁছানো অনেক যাত্রীই টার্মিনালের বাইরে দাঁড়িয়ে বা বসে অপেক্ষা করেন। হবিগঞ্জ থেকে আসা মাজু মিয়ার মতো অনেকে জানেনই না, কার পার্কিং এলাকার পাশে তাদের জন্য আলাদা ওয়েটিং লাউঞ্জ রয়েছে। তিনি বলেন, "ওয়েটিং লাউঞ্জ আছে—এটা প্রথম শুনলাম! যাত্রীদের তো জানানো উচিত।"
ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা জোরদারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৭ জুলাই নির্দেশনা দেয়—ডিপার্চার ড্রাইভওয়ে বা অ্যারাইভাল ক্যানোপি এলাকায় প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজন স্বজন থাকতে পারবেন।
এই সিদ্ধান্তে টার্মিনালের ভেতরে ভিড় কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে বাইরে—বিশেষ করে প্রবেশগেটে—যাত্রী ও স্বজনদের ভোগান্তি বেড়েছে।
পরিস্থিতি উন্নতির দাবি কর্তৃপক্ষের, তবে বিলম্বও স্বীকার
বিমানবন্দরের প্রবেশপথে দীর্ঘ যানজট প্রসঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ টিবিএসকে বলেন, নিরাপত্তাজনিত কঠোর তল্লাশির কারণেই এ জট তৈরি হয়।
তিনি বলেন, "সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই চেকিং অত্যন্ত জরুরি। জট কমাতে আমরা দ্রুততার সঙ্গে তল্লাশি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।"
সাইনেজ ইস্যু নিয়ে তিনি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে টার্মিনাল ভবন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অ্যারাইভাল, ডিপার্চার এবং ডোমেস্টিক টার্মিনালের জন্য পর্যাপ্ত নির্দেশনা স্থাপন করা হয়েছে। তবে কিছু সাইনেজ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে—যা দ্রুত পরিবর্তন ও হালনাগাদ করা হবে।
কর্তৃপক্ষের মতে, হজ ক্যাম্পের কাছে আন্ডারপাস নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে কাজটি চলছে, এবং সম্পন্ন হতে আরও এক বছর লাগতে পারে।
রাগিব সামাদ বলেন, "সাময়িকভাবে সড়ক মেরামত চলছে; তবে আন্ডারপাসের কাজ শেষ হলে প্রবেশপথের স্থায়ী সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।"
