‘ঘরের ছেলে ঘরে চলে আসুন, অন্যদের সঙ্গে মানায় না’: ৮ দলের বাইরের ইসলামি দলগুলোকে শফিকুর
আট দলের বাইরে থাকা ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, 'আজকে সমস্ত ইসলামী এবং দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ইস্পাত কঠিন ঐক্য ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে। দুই একটি ইসলামী দল এখনো এর বাইরে আছেন। আমি বন্ধুদেরকে অনুরোধ করব, সকল ধরনের মোহের জাল ছিন্ন করে আপনারা আপনাদের আঙ্গিনায় চলে আসুন।'
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যারা শরিয়াহ আইন বিশ্বাস করে না এবং মুসলমানদের 'জঙ্গি' বা 'মৌলবাদী' বলে আখ্যায়িত করে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের সাথে আপনাদের মানায় না। আপনারা বড় বেমানান হয়ে গেছেন সেখানে। ঘরের ছেলে আপনারা ঘরে চলে আসুন। আপনাকে জড়িয়ে কবুল করব ইনশাআল্লাহ। অভিনন্দন জানাব, সম্মান দেব, ভালোবাসব। অন্য ঠিকানায় থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
'আপনি কেন চাঁদাবাজদের অংশীদার হবেন? আপনি কেন দখলদারের সমর্থক হবেন? আপনি মেহেরবানী করে এই অপবাদ নিজেদের গলায় তুলে নেবেন না', যোগ করেন তিনি।
বক্তব্যে জামায়াত আমির কারও নাম উল্লেখ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তা'আলাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা কোনো পাত্তাই দেই না। কিন্তু কেউ যেন আমাদের ওপরে কোনো দাদাগিরি করতে না আসে।'
জনগণ আগামী নির্বাচনে কাউকে কাউকে 'লাল কার্ড' দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, 'এখন আবার কোথাও কোথাও আমরা ভিন্ন সুর শুনতে পাচ্ছি। যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য "নির্বাচন নির্বাচন" করে জনগণকে বেহুঁশ করে তুলেছিলেন, এখন তারা ভিন্ন সুরে কেউ কেউ কথা বলতে শুরু করেছেন। এ লক্ষণ ভালো নয়। তারা বুঝতে পেরেছেন, তারা যে সমস্ত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে পরিচালনা করছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে আগামী নির্বাচনে লাল কার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই লাল কার্ড দেখা থেকে বাঁচতে গিয়ে যদি কেউ আগামী নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেন, আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলছি—তাদের সকল ষড়যন্ত্র এদেশের সংগ্রামী জনগণ ভণ্ডুল করে দেবে ইনশাআল্লাহ। কেউ যদি বাঁকা পথে প্রশাসনিক ক্যুর মাধ্যমে নির্বাচনের ক্রেডিট হাইজ্যাক করতে চান, তবে সেই সূর্য ডুবে গেছে, এই সূর্য আর বাংলাদেশে উঠবে না।'
জামায়াতের এই নেতা বলেন, 'একদল যে অপকর্ম করে চলে গিয়েছে, আরেক দল বাংলাদেশে সেই অপকর্মের দায়িত্ব নিয়েছে। একদল চাঁদাবাজি করার কারণে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেক দল আবার তার চাইতে বেশি শক্তি দিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে।'
'একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আরেক দল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে। একদল জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আলেম-ওলামা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আরেক দল ঠিক একই পথ ধরেছে, এমনকি নিজেদের মধ্যে মারামারিতেও নিজেদেরকে শেষ করে দিচ্ছে', আরও বলেন তিনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় রক্ত ও ত্যাগের পর দেশবাসী আশা করেছিল রাজনীতিবিদরা অতীতের শিক্ষা নিয়ে নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একদল সেই পুরাতন ধারায় পড়ে আছে। তারা কোনো সংস্কারে রাজি না, তারা গণঅভ্যুত্থানেও প্রথমে রাজি ছিল না।
আগামী দিনে বাংলাদেশ লুটপাটকারীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণের হাতে উঠবে এবং নতুন সূর্য উদিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
একই সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, 'গত ১৭ বছর সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত সময় পার করেছে দেশের ইসলামপন্থীরা। যে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ উৎখাতে জনগণ প্রাণ দিয়েছে তা আর ফিরে আসবে না৷'
তিনি বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখতে গণভোটে হ্যাঁ জয়যুক্ত করার বিকল্প নেই৷ যারা না ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাবে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।'
'আমাদের বিভাগীয় কর্মসূচি দেখে একটি দলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ তারা এখন নির্বাচন পেছানোর পায়তারা করছে', আরও বলেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, 'সাত বিভাগীয় সমাবেশের পর এটা প্রমাণিত হয়েছে যে জনগণ আমাদের পাঁচ দফার সঙ্গে একমত।'
তিনি বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার আর সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল গণআকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষার কবর রচিত হয়েছে বলেই আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে।'
রেজাউল করীম বলেন, 'যারা চাঁদাবাজি, দুর্নীতি আর অপরাধে নিমজ্জিত তাদেরকে আগামী নির্বাচনে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।'
