আমরা ৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, 'আমরা আট দলের বিজয় চাই না, আমরা ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।'
শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে আট দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে ওইদিন সকাল থেকেই লালদীঘির ময়দানে মিছিলে মিছিলে জড়ো হতে থাকেন ৮ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ নগরবাসী। দুপুর পৌনে ২টা থেকে সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। সমাবেশের ফাঁকে ফাঁকে নেতাকর্মীরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্লোগান দেন।
বিগত সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ মেখে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেয়া হবে না।'
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, 'বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।'
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, 'ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে।'
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, 'বাংলাদেশ গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেওয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে চাই। ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের ব্যবস্থা রচনা করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এবার ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। সকল চক্রান্ত ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনতার বিজয় হবে।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ-ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।' এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, 'ব্রিটিশরা এ দেশ থেকে চলে গেলেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বৈষম্য দূর হয়নি। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা শাসক ছিল, তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। তাই ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামীতে আবারও চাঁদাবাজ ও জালেমদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।'
তিনি বলেন, 'ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না। কেউ দশ তলায় আর কেউ নিচতলায় থাকবে, সেটা আর হবে না। আমরা ইসলামের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে চাই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামীতে ক্ষমতায় যাবে ইনশাআল্লাহ। সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠন করতে হবে এবং যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র বা হুমকি-ধমকি দেশের মানুষ মানবে না।'
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারাই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না। বাংলাদেশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে যে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে।'
সমাবেশে ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।
এছাড়া সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী ও মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন ও নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন।
