২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৯০% মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে: বিশ্বব্যাংক
সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু ঝুঁকি দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের শিকার হতে পারে। পাশাপাশি প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
'বাংলাদেশ অ্যান্ড আদার সাউথ এশিয়ান কান্ট্রিজ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স উইল বি প্রাইভেট সেক্টর লেড' শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ। এ কারণে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনো প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে এসব প্রস্তুতি মূলত কম খরচের সমাধানে সীমাবদ্ধ; আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত অবকাঠামো বা সরকারি সহায়তার সুযোগ তারা বেশি পায়নি।
২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপের বরাত দিয়ে বিশ্বব্যাংক জানায়, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষার ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ পরিবার দুর্যোগ প্রতিরোধক অবকাঠামোর অভাবকে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অর্থের অভাবকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলে দরিদ্র ও কৃষিজীবী পরিবারগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাঁধ ও সাইক্লোন শেল্টারের মতো সরকারি বিনিয়োগ বহু মানুষের জীবন রক্ষা করেছে—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা তার প্রমাণ। তবে সরকারের বাজেট সীমিত হওয়ায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ভূমিকার ওপর নির্ভরতা বাড়তে চলেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন বা এ সংক্রান্ত 'অভিযোজনের' মূল চাপ বহন করছে সাধারণ পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সঠিকভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ কাজে লাগাতে পারলে জলবায়ুজনিত ক্ষতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব। সরকার ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো, যাতায়াত ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং নমনীয় সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের পরিচালক জঁ পেসমে বলেন, 'বাংলাদেশের টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াতে হলে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ুবান্ধব কৃষি এবং অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি 'টেস্ট কেস' বা পরীক্ষামূলক উদাহরণ।'
বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, সরকার-বেসরকারি খাতের মধ্যে জরুরি ও সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। সঠিক বিনিয়োগ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও সক্রিয় অংশীদারত্বের মাধ্যমেই জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।
