ভূমিকম্পে ৬ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন ১১০০ মেগাওয়াট
আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কম্পনের পরপরই দেশের ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র একযোগে 'ট্রিপ' বা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে অন্তত ১,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিপর্যয় সামাল দিয়ে বিকেল নাগাদ ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় সচল করা সম্ভব হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতির আশা করছেন তারা।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) জহুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'ভূমিকম্পের পরপরই অন্তত ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রিপ করে (বন্ধ হয়ে যায়)। আমরা এখন বিকল্প যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি যাতে সাবস্টেশনটি দ্রুত চালু করা যায়, কারণ এই সাবস্টেশনের সঙ্গে অনেকগুলো বিতরণ লাইন যুক্ত রয়েছে।'
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে। কম্পনের সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেশের বৃহত্তম এই বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটিও হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়।
পিডিবির জনসংযোগ পরিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের পরপরই সামিট গ্রুপের বিবিয়ানা-২ (৩৪১ মেগাওয়াট সিসিপিপি) এবং পিডিবির বিবিয়ানা-৩ (৪০০ মেগাওয়াট সিসিপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে বিবিয়ানা-৩ এর ১৩৪ মেগাওয়াট স্টিম টারবাইনও অকেজো হয়ে পড়ে।
এছাড়া আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি-এর ৭৫ মেগাওয়াট স্টিম টারবাইন ট্রিপ করেছে। একইসঙ্গে আশুগঞ্জ প্রিসিশন (৫৫ মেগাওয়াট) এবং আশুগঞ্জ টিএসকে (৫০ মেগাওয়াট)—উভয় ইঞ্জিনভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে সিরাজগঞ্জ ইউনিট-১ এর ২২এস মেগাওয়াট কেন্দ্রের ৭৫ মেগাওয়াট স্টিম টারবাইনও বন্ধ হয়ে গেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘোড়াশাল সাবস্টেশনের ইনসুলেটর, ব্রেকার বুশ, বাসবার এবং আইসোলেটরগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এই সাবস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভি—সবগুলো লাইন বিদ্যুৎহীন (আন-এনার্জাইজড) হয়ে পড়েছে। একারণে আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা বা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পিডিবি সদস্য জহুরুল ইসলাম বলেন, 'নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পিডিবি ইতিমধ্যে ২০০-২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সচল করতে সক্ষম হয়েছে। পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এখনো চলছে।" এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট পুনরায় চালুর চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, "এটি সম্ভব হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'
আজকের এই ভূমিকম্প দেশের বিদ্যুৎ অবকাঠামোর নাজুক অবস্থাকে আবারও সামনে নিয়ে এলো।
