রোগীশূন্য পড়ে আছে চট্টগ্রামের রেলওয়ে হাসপাতাল, আশপাশের হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়
 
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই শয্যার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। জায়গা না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন বারান্দা কিংবা ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে। অথচ অল্প দূরত্বেই সিআরবিতে অবস্থিত ১৪৪ শয্যার রেলওয়ে হাসপাতাল প্রায় রোগীশূন্য পড়ে আছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও শয্যা থাকা সত্ত্বেও ইনডোর সেবা বন্ধ থাকায় সেখানে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।
চমেক হাসপাতালে ২,২০০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ৩,৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালটি চরম চাপের মুখে। ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও একই অবস্থা। ফলে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে অনেক সময় রোগীদের ফ্লোরে বা অনুপযুক্ত স্থানে চিকিৎসা নিতে হয়।
এর বিপরীতে, রেলওয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন হাতে গোনা কয়েকজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে সাধারণ রোগীদের জন্য হাসপাতালটি উন্মুক্ত করা হলেও অন্য হাসপাতালের চাপ কমাতে তা কার্যকর হয়নি।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১৭ জন চিকিৎসক, ৬ জন নার্স, ১৭ জন ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট এবং ৩৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কর্মরত আছেন, কিন্তু কাজের চাপ নেই বললেই চলে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার তাহমিনা ইয়াসমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইনডোর চালু করতে গেলে সাধারণ রোগীদের খাবার ও ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে। এখনো তা সম্ভব হয়নি, তাই আপাতত শুধু আউটডোর সেবা চালু রাখা হয়েছে।"
রেলওয়ে হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ইনডোর বিভাগে গড়ে ৫ জন রোগী চিকিৎসা নেন। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভর্তি রোগী মাত্র ২ জন। অধিকাংশ কক্ষে ঝুলছে তালা; জানালা দিয়ে দেখা যায়, বহু শয্যা অযত্নে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স ও কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল মূলত রেলকর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য চালু হয়েছিল। রোগীর চাপ কমাতে গত এপ্রিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মে মাসে চালু হয় আউটডোর সেবা। তবে ইনডোর সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় এখনো ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখানে রেলকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা পান, আর সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে ৫ টাকা ফি নেওয়া হয়। রেলওয়ে হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন।
বর্তমানে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে অর্থোপেডিকস, গাইনোকোলজি ও অবস, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, ইএনটি, ডেন্টাল এবং সার্জারি বিভাগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগ বা সার্জারি চালুর মতো অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। সীমিত আকারে চলছে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি সেবা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, ৪টি হাসপাতাল ও ১৭টি ডিসপেনসারির (প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র) জন্য বার্ষিক বরাদ্দ বাজেট মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা ওষুধ এবং ৫০ লাখ টাকা সার্জিক্যাল সরঞ্জামের জন্য নির্ধারিত। ফলে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে রেলওয়ে হাসপাতালগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ মেডিকেল অফিসার ইবনে সফি আব্দুল আহাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রেলকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ইনডোর সেবা এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। পুরো পূর্বাঞ্চলের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, অনেক উপজেলা হাসপাতালেও এর চেয়ে বেশি বাজেট থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করতে অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন।"
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নতুন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমকেও একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
 

 
             
 
 
 
 
