জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কী সুপারিশ করল ঐকমত্য কমিশন
 
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশ প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে, মেয়াদ, নারীদের উপস্থিতি এসব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাতে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানসংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ে আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নের পথনির্দেশ করার জন্য কমিশন সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে। এজন্য সরকারের কাছে দুটো বিকল্প হাতে আছে।
তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, যেন অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে। সেই আদেশের আলোকে গণভোট আয়োজন করে।'
উচ্চকক্ষের গঠন কীভাবে?
সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য নির্বাচিত হবেন। গণভোটে জনগণের সম্মতি এলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
উচ্চকক্ষের মেয়াদ হবে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। তবে কোনো কারণে নিম্নকক্ষ ভেঙে গেলে উচ্চকক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।
আরও সুপারিশ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। এ তালিকায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী থাকতে হবে।
উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা কী হবে?
উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়েও সুপারিশে উল্লেখ করেছে কমিশন।
বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। উচ্চকক্ষের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না; তবে কোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য নিম্নকক্ষ বরাবর প্রস্তাব করতে পারবে। নিম্নকক্ষে পাসকৃত অর্থবিল এবং আস্থা ভোট ব্যতীত সব বিল উচ্চকক্ষে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না।
উচ্চকক্ষ কোনো বিল সর্বোচ্চ দুই মাসের বেশি আটকে রাখলে তা উচ্চকক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বলে বিবেচিত হবে।
এছাড়াও যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, সেক্ষেত্রে উভয় কক্ষ কর্তৃক পাসকৃত বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে।
যেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ সংশোধনের সুপারিশসহ বিল পুনর্বিবেচনার জন্য নিম্নকক্ষে পাঠাবে সেক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ উচ্চকক্ষের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
উচ্চকক্ষ থেকে ফেরত পাঠানো বিল যদি নিম্নকক্ষের অধিবেশনে আবারও পাস হয়, তবে উচ্চকক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত যেকোনো বিল উচ্চকক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করতে হবে।

 
             
 
 
 
 
