জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোশাকখাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রম অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা মালিকদের
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের শ্রমঘন পোশাক শিল্প এলাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রমিক অসন্তোষ ও নাশকতামূলক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পমালিকরা। এ খাতে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা রোধে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন।
বিশেষত, বকেয়া পাওনা ইস্যু ছাড়াও অন্য কোনো কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে সেটিকে পুঁজি করে কোনো মহল যেন বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শিল্পের ক্ষতি করতে না পারে—সে বিষয়ে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
রোববার (২৬ অক্টোবর) উত্তরার বিজিএমইএ কার্যালয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) নেতারা নির্বাচনকালীন সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং সহায়তা চান। সভায় সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "নির্বাচনের সময় কেউ যেন দুরভিসন্ধিমূলক কিছু করতে না পারে—আমরা আমাদের সেই উদ্বেগ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, যাতে এই খাতে বাড়তি সহায়তা পাওয়া যায়।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের আশঙ্কা, নির্বাচনের সময় পোশাক খাতে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাই আগেভাগেই বিষয়টি জানানো হয়েছে।"
বিজিএমইএর পরিচালক শেখ হোসাইন মোহাম্মদ মুস্তাফিজ টিবিএস-কে বলেন, "নির্বাচনকালীন সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের একটি আশঙ্কা রয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে। আমরা চাই, এমন কোনো ঘটনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে।"
তিনি বলেন, "অসন্তোষের মূল কারণ সাধারণত বকেয়া মজুরি–সংক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে মজুরির বাইরে অন্যান্য ইস্যুতেও হঠাৎ করে অস্থিরতা দেখা দেয়। আমরা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যেন যারা বেতন দিতে পারছে না, তাদের সমস্যা সমাধান করা যায়। প্রয়োজনে অনুপস্থিত কারখানা মালিকের সম্পদ বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "আমাদের বড় আশঙ্কা হলো—হঠাৎ রাস্তায় নেমে পড়া। নির্বাচনের সময় এমন পরিস্থিতি ঘটতে পারে, তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।"
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানওয়ার জাহান ভূঁইয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হলেও গতরাত ১০টা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে একইদিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত এক বৈঠকেও পোশাক খাতের বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু।
টিবিএস-কে তিনি বলেন, "সভায় বলা হয়েছে, পোশাক খাতে বড় কোনো অস্থিরতার ইস্যু নেই। তবে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।"
এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএস-কে বলেন, "বর্তমানে অন্তত পাঁচটি কারখানায় বকেয়া বেতন নিয়ে আলোচনা চলছে। রোববারও ময়মনসিংহের একটি কারখানার শ্রমিকদের প্রতিনিধি শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করেছেন।
