ইসিকে অবৈধ অস্ত্র–কালো টাকা দমন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান রাজনৈতিক দলগুলোর
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও কঠোরভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপে এসব দাবি উঠে আসে। দলগুলোর নেতারা বলেন, অনিয়ম ও ভয়ভীতি বন্ধ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, "নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি এগোচ্ছে; এ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।"
সোমবারের সংলাপের প্রথম সেশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
দ্বিতীয় সেশনটি দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলে। এতে অংশ নেন জাকের পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)-এর প্রতিনিধিরা।
আচরণবিধি বাস্তবায়নে শিথিলতার অভিযোগ
সংলাপে বিভিন্ন দলের নেতারা অভিযোগ করেন, আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না; বড় দলের প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল কালো টাকার প্রভাব, পেশিশক্তির ব্যবহার এবং এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ না হলে নির্বাচন 'তামাশায়' পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে।
এছাড়া আইন করে নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইসির অধীনে আনার প্রস্তাব আসে। দলের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সীমিত করা, জামানত কমানো, পোস্টার-ব্যানার ব্যবহার সীমিত করা এবং পোস্টাল ও প্রবাসী ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও প্রস্তাব দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সিইসি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং অযথা সমালোচনা না করার আহ্বান জানান।
এআই অপব্যবহার, কালো টাকা ও ভয়ভীতির আশঙ্কা
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ অভিযোগ করেন, আচরণবিধিতে বেশ কিছু সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে; আইন ও আচরণবিধি—উভয় ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ইসি বহন না করলেও অনুদান গ্রহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেন তিনি।
এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দাবি করে তার ব্যক্তিগত ক্ষতির প্রসঙ্গ তুলে ফুয়াদ বলেন, "পর্নগ্রাফি থেকে শুরু করে এমন কোনো বাজে কাজ নেই যা আমার নামে ছড়ানো হচ্ছে না। কীভাবে বন্ধ করবেন? কিছু একটা করে দেখান না। আপনি যদি এখনই এটা করতে না পারেন, আমি আস্থা পাবো কীভাবে?"
বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান বলেন, দলগুলোকে দিয়ে আচরণবিধি কীভাবে মানাবেন সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, "বড় দলের প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আপনি প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন? অতীতে তো দেখিনি। বিধিভঙ্গের কারণে দুটি, পাঁচটি বা দশটি আসনে প্রার্থিতা বাতিল করলে বাকিরা সোজা হয়ে যাবে।"
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেন, তফসিল ঘোষণার পর বড় দলগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করলে দুটি বড় উপাদান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে—কালো টাকার প্রভাব ও পেশিশক্তি। "সত্যিকার অর্থে বিতর্কমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে যে কোনো মূল্যে কালো টাকার প্রভাব বন্ধ করতে হবে; সেটা করতে না পারলে নির্বাচন তামাশায় পরিণত হবে," বলেন তিনি।
ইসিকে স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবালয়ের টেবিল থেকে যদি ইসি নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে সেই নির্বাচন কমিশন কখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট একটি দলের প্রতীক বরাদ্দ ইস্যুতে ইসি নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। "এতে ইসির স্বাধীনতা ও দৃঢ়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ইসি স্বাধীন নয়—এটা বোঝা গেছে। ইসি স্বাধীন না হলে তার পরিচালিত নির্বাচন জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।"
এদিকে গত চার দিনে নির্বাচন কমিশন সংলাপে অংশ নিতে মোট ৪৮টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)সহ আরও ১২টি দলকে বুধবারের সেশনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
