জাতীয় নির্বাচন: শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ২,৫৮২ প্রার্থী
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশের ৩০০টি নির্বাচনি আসনে মোট ২ হাজার ৫৮২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে লড়তে মোট ৩ হাজার ৪০৭টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আর বাড়ানো হবে না।
গতকাল সারাদিনই রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উৎসবমুখর ও সরগরম। দেশের বিভিন্ন স্থানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ছিল।
অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে নানা ধরনের ঘটনা, দুর্ঘটনা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দেখা যায়। সে তুলনায় এবারের চিত্র অনেক ভালো। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া বড় কোনো সমস্যা হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, এবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলার প্রবণতাও তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। 'বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনের বেশি লোক ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ এই নিয়ম মেনেছে। শুরুতে কিছু জায়গায় ব্যত্যয় ঘটলেও নির্দেশনার পর সবাই তা মেনে চলেছেন,' বলেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এখন যাচাই-বাছাই শুরু হবে। এরপর আপিল গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তি করা হবে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২১ জানুয়ারি। পরদিন থেকেই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত চলবে এই প্রচারণা।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে একটি গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া।
এছাড়া ঢাকা-১৫ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। জামায়াত নেতারা বলেন, একটি 'অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য' নির্বাচনের প্রত্যাশায় তারা অংশ নিচ্ছেন। একইসঙ্গে তারা নির্বাচন কমিশনকে সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মিত্রদের জন্য ১৭ আসন ছাড়ল বিএনপি
দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপি তাদের শরিক দল, জোট ও আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের জন্য ১৭টি আসন ছেড়ে দিয়েছে।
এর মধ্যে আন্দোলনের শরিক ৯টি দলকে ১২টি আসন দেওয়া হয়েছে। এসব আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। অন্যদিকে যুগপৎ আন্দোলনের পাঁচজন নেতা নিজ দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছিল। গতকাল এই তিনটি আসনেই তার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। তবে এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীও রাখা হয়েছে। ফলে আজ মঙ্গলবার তিনি প্রয়াত হওয়ায় এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীরা লড়বেন।
৪৭ আসনে এনসিপির মনোনয়ন জমা
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে ৪৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গতকাল সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করেছেন। তবে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, জোটের অধীনে ঠিক কতগুলো আসনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা চূড়ান্ত না হওয়ায় আপাতত ৪৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকেনও, তবে সেখানে 'না' ভোট যুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে নির্বাচন কমিশন শুধু একটি কেন্দ্র নয়, প্রয়োজনে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
