ল্যাবএইডের এআই উদ্যোগ: স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে দেশীয় ডেভেলপারদের নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত

চিকিৎসা সেবা আরও স্মার্ট ও নির্ভুল করতে ল্যাবএইড গ্রুপ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক হেলথটেক সলিউশন উন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়া সারাদেশে ৩০টি স্যাটেলাইট ক্যানসার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ল্যাবএইড ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ শামীম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, "ল্যাবএইড আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামে একটা কোম্পানি আছে আমাদের। এর আওতায় 'ভার্চুকেয়ার বিডি' ও 'লাইফ প্লাস বাংলাদেশ' — এই দুটি ডিজিটাল হেলথকেয়ার প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। এরমধ্যে লাইফ প্লাস গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ৩৬০-ডিগ্রি হেলথটেক প্ল্যাটফর্ম, যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ।
তিনি আরো বলেন, "আমরা নিজেরাই একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) তৈরি করেছি, প্রায় ৬-৭ মিলিয়ন ডেটাসেট ব্যবহার করে। গত এক বছর ধরে আমরা এনিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে আমাদের দুটি প্রোডাক্ট তৈরি হয়েছে—ল্যাবএইড জিপিটি এবং লুনা।"
ল্যাবএইড জিপিটি মূলত চিকিৎসকদের জন্য একটি এআই-ভিত্তিক সেকেন্ড ওপিনিয়ন সিস্টেম, যেখানে রোগীর রিপোর্ট আপলোড করলে টিউমার বা অন্যান্য জটিলতা সম্পর্কিত বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। "এটি ইতোমধ্যে আমাদের হাসপাতালে এটি ইউজ করা হচ্ছে। আগামী মাসে কনজিউমারদের জন্য আমরা লঞ্চ করব'' – সাকিফ বলছিলেন।
তিনি জানান যে, "আমরা একটি এন্টারপ্রাইজ সল্যুশনও তৈরি করছি—যেটা চ্যাটজিপিটির মতো আরেকটা ভার্সন। এটি চিকিৎসাগত উপসর্গ বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক ও নির্ভরযোগ্য উত্তর দিতে পারবে, যা গুগলে অথেন্টিক পাওয়া সম্ভব নয়। এটি ল্যাবএইড জিপিটি'র অংশ হিসেবে বর্তমানে ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।"
"অন্যদিকে, লুনা একটি পার্সোনাল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট, প্রফেশনালদের জন্য। যেটা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি স্পেসিফিক পরামর্শ দিতে পারবে। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত" - তিনি যোগ করেন।
সাকিফ আরও বলেন, ল্যাবএইডের এআই দল ইতোমধ্যেই আটটি পেটেন্ট ফাইল করেছে। প্রত্যেকটি পেটেন্টই ৭০–৮০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত ডকুমেন্ট। এগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে রিভিউতে (পর্যালোচনায়) আছে। "যদি কোনো আপত্তি না আসে, তবে এই ধরনের পণ্য নিয়ে আমরাই বিশ্বে প্রথম হব।"
ভার্চুয়াল হাসপাতাল
ল্যাবএইড ভার্চুয়াল হাসপাতাল তৈরির জন্যও কাজ করছে। এটি হবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্ল্যাটফর্মে, যেখানে মেডিকেল ট্রেনিং, সার্জারি সিমুলেশন ও ইমার্জেন্সি প্র্যাকটিস করা যাবে।
সাকিফ বলেন, "এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম হবে যেখানে আপনি একজন ট্রেইনি হিসেবে অপারেশন করতে পারবেন। এটা এমন যেখানে সারা মেডিকেল ওয়ার্ল্ড-ও কানেক্টেড থাকবে।"
দেশীয় ডেভেলপাররা তৈরি করছে এআই সলিউশন
"আমাদের দেশের মেধাবী তরুণরাই এই প্রযুক্তিগুলো তৈরি করছে। আমরা দেশের ডেভেলপারদের প্রতি আস্থা রাখি। কিছু বিদেশি অধ্যাপক ও গবেষক আমাদের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত আছে," জানান সাকিফ।
বর্তমানে ল্যাবএইড এআই টিমে প্রায় ৪০ জন বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। ল্যাবএইড তাদের সফটওয়্যার সলিউশন শুধু দেশের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাজারের জন্যও প্রস্তুত করছে। মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও লাওসকে টার্গেট করে কাজ করছে।
স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ
ল্যাবএইডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সাকিফ শামীম জানান, আমরা সারাদেশে ৩০টি স্যাটেলাইট ক্যানসার সেন্টার গড়তে চাই, যেখানে কেমো ও রেডিয়েশন সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া পূর্বাচলে ৭৫০ শয্যার একটি মাল্টি-স্পেশালিটি ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
"এসব হাসপাতাল পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে আমরা ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল ও মাউন্ট সিনাই নিউইয়র্কের সঙ্গে টেকনিক্যাল ও ট্রেনিং সাপোর্ট নিয়ে আলোচনা করছি" – যোগ করেন সাকিফ।