সরকারি স্টাফ বাসের অবৈধ পার্কিং লটে পরিণত হয়েছে কারওয়ান বাজার-এফডিসি সড়ক

ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে একটি কারওয়ান বাজার ও এফডিসি চৌরাস্তা সংযোগ পথ কার্যত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস পার্কিংয়ে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিদিন যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।
প্রতিটি কর্মদিবসে এই সড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০০টি বাস ও অন্যান্য যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। এগুলো তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের।
যদিও বাসগুলো শুধুমাত্র অফিসে যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয়, চালকেরা দিনভর এগুলো সড়কের ধারে রেখে দেন। ফলে সড়কের জায়গা সংকুচিত হয় এবং যানজট আরও বাড়ে।
চালক ও কর্মকর্তারা দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন
বাস চালকরা বলেন, কর্মীদের নামানোর পর শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে দীর্ঘ দূরত্ব পার হওয়ায় তাদের সড়কে বাস পার্ক করার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি পেয়েছেন।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বাস চালক রতন মিয়া বলেন, 'আমি জানি এটা অবৈধ, কিন্তু আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমাদের কোম্পানি পার্ক করার কোনো নির্দিষ্ট স্থান দেয়নি।'
তিতাস গ্যাসের এক বাস চালক জানিয়েছেন, প্রতিদিন এলাকায় ২০টির বেশি বাস পার্ক করা হয় এবং কর্মকর্তারা মৌখিক নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিতাস গ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার (জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশন) সৈয়দা আতিকা বিলকিস বলেন, 'বাস কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহনের জন্য। তাদের সড়কে পার্ক করার কোনো অনুমতি নেই। এটি অবৈধ, তাই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিচ্ছি না।'
যাত্রীরাই বেশি ভোগান্তিতে
অফিসগামী যাত্রীরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কারওয়ান বাজার–এফডিসি সংযোগ সড়কটি ইতোমধ্যেই পাইকারি বাজার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ, নিকটস্থ রেল ক্রসিং এবং ভারী বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কারণে সরু হয়ে পড়েছে।
যাত্রী শফিয়া খাতুন বলেন, 'অফিসের সময় এই সড়ক পার হওয়া সত্যিই দুঃস্বপ্নের মতো। স্টাফ বাসগুলো সড়কের উভয় পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, অন্য যানবাহনের জন্য কোনো জায়গা থাকে না।'

গাড়িচালক হুমায়ূন সিকদার বলেন, 'সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গা পার্ক করা বাসে ভরে গেছে। ফলে ট্রাফিক একলাইনে চলছে। ভোগান্তি শুধু বেড়েই চলেছে।'
চালকরা বলেন, এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ পার হতে প্রায় ২০–৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাগে। আর পথচারীদের ফুটপাথে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সড়কে হাঁটতে হচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিনের সমস্যা, নেই পর্যাপ্ত আইন প্রয়োগ
ট্রাফিক পুলিশ স্বীকার করেছে, এই সমস্যা বহু বছর ধরে চলমান।
কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট বলেন, 'অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং এলাকা নেই, তাই তাদের বাস সড়ক দখল করছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যা চলতেই থাকবে।'
সড়কটি ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ ও মগবাজার সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানে যানজট পুরো শহরে প্রভাব ফেলে।
নাগরিক ও নগর পরিকল্পনাকারীরা দাবি করছেন, সরকারি স্টাফ বাসের জন্য অফিস প্রাঙ্গণ বা নিকটস্থ বহুতল পার্কিংসহ নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (জোন-৫) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা সাধারণত অবৈধ পার্কিং সরানোর অভিযান চালাই না। আমাদের কার্যক্রম মূলত ফুটপাথ দখল ও অবৈধ নির্মাণকাজের প্রতি বেশি মনোযোগী। আমরা তেজগাঁওয়ে ট্রাক পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলাম, কিন্তু এই সড়কে নয়।'