'প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরতন্ত্রের প্রেতাত্মা' সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি: ইসির সঙ্গে সংলাপে সুশীল সমাজ

সুষ্ঠু সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার ১০ টা ৪০ মিনিটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এ সংলাপ শুরু হয়।
সংলাপের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, 'সুষ্ঠু সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়েছে। যে গ্যাপ আছে আশা করছি আপনাদের সঙ্গে সংলাপে সেটা পূরণ হবে।'
ইসির আমন্ত্রণে এসেছেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, কবি মোহন রায়হান, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক। গত ১৫ বছর বা এখনও ভয়োলেন্স নরমালাইজ হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় আপনারা এটা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটা দেখার বিষয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, 'আগেও এমন সংলাপে এসে ভালো ভালো কথা বলেছিলাম কিন্তু সেটা আমলে নেওয়া হয় নি। এখনও এসেছি কতটুকু রাখা হবে সেটা সময় বলে দিবে। তবে ডাকা হয়েছে আলোচনা হচ্ছে এটা ভালো। আসুন আগামী নির্বাচন সবাই মিলে এমন ভাবে করি যাতে এটা সুন্দর নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে থাকে।'
এসময় তিনি ইসি কর্মকর্তাদের জাতীয় নির্বাচনের সময় রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, তারা সারা বছর নির্বাচন নিয়ে কাজ করেন, তারা এ বিষয় অভিজ্ঞ। সাধারণ আমলারা নির্বাচনের বিষয় ইসি কর্মকর্তাদের মতো এত অভিজ্ঞ নয়।
টিআইবির পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, 'না' ভোটের ব্যবস্থা যেন সব আসনেই থাকে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে তাকে 'না' ভোটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
কবি মোহন রায়হান বলেন, 'এখনও প্রশাসনের রন্দ্রে রন্দ্রে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা রয়েছে তারা কিন্তু সুন্দর নির্বাচন হতে বাধা দিবে। এই বিষয় ইসিকে সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচন অবাধ করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন আপনাদের সদিচ্ছা।'
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, শুধু ঋণখেলাপিদের না যারা অর্থপাচারকারী তারাও যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই আইন করতে হবে।
এদিকে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, "৫৫ বছর পরও নারীদের জন্য মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ আসনের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের ন্যূনতম দাবি—৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য নিশ্চিত করা।"
তিনি আরও বলেন, নারীরা শুধু ভোটার নন, তারা সমাজের প্রতিটি স্তরে অবদান রাখছেন। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের অংশগ্রহণকে প্রান্তিকভাবে দেখছে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন, নারীদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ভোটের আগে, চলাকালে ও পরে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
প্রবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, "প্রবাসীদের সন্তানরা পড়াশোনার জন্য দেশে থাকে। তাদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণকেও গুরুত্ব দিতে হবে।" তিনি মনে করিয়ে দেন, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না।