অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার, দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের অন্যান্য কর্মসূচি চলবে

আগামিকাল আবার কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়ে দুই ঘণ্টা পর অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়ে আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
এর আগে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসুতে) ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থা ও পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন করার চেষ্টার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
আজ বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এসময় তাদেরকে 'শুনে রাখো রাজাকার, এ দেশ আমার বাপদাদার'; 'ষড়যন্ত্র হয়নি শেষ, সজাগ থাকো বাংলাদেশ' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখে যায়।
কর্মসূচিতে জানানো হয়, গত রোববার ছাত্রদলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও সাবেক সমন্বয়কের কয়েকজনের নির্দেশে হামলা চালানো হয়। এতে তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত না করা পর্যন্ত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনার গঠন না করা পর্যন্ত তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি চলবে বলে জানানো হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, 'আমরা রাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কিন্তু আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। দাবি মেনে নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।'
তিনি বলেন, 'গতকালের ছাত্রশিবিরের হামলায় আমাদের ১০ জন আহত হয়েছেন, যাদের রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।'
তিনি অভিযোগ করেন, 'ছাত্রশিবির, বাগছাসসহ তাদের ছোট সংগঠন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা করেছে।'
রাকসুর নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেছেন, '২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। প্রশাসন যদি তা আয়োজন করতে পারে, তবে সেই অনুযায়ী অন্তর্ভুক্তি হবে।'
গতকাল রোববার সকালে রাকসু নির্বাচনের ভোটার লিস্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রাবি ছাত্রদল।
অবস্থান কর্মসূচির এক পর্যায়ে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় ও ভাঙচুর করে। এতে মনোনয়নপত্র উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির, স্টুডেন্টস রাইট অ্যাসোসিয়েশন ও কয়েকজন সমন্বয়কদের সাথে ছাত্রদলের কয়েক দফা হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে এবং ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুপুরে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন ইসলামী ছাত্রশিবির, স্টুডেন্টস রাইট অ্যাসোসিয়েশন ও সমন্বয়কদের একটি অংশ। তারপর তারা মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।
ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সন্ধ্যায় সিনেট ভবনে এক সভা ডাকে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সভায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এবং সভায় আন্দোলনে চিহ্নিত হামলাকারীদের রাখা হয়েছে উল্লেখ করে সভা বয়কট করে ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনের জোট 'গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট' এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ।
এদিকে, রাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র উত্তোলনের সময়সীমা আজ এবং আগামীকাল আরো দুদিন বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার দুপুরে সিনেটে রাকসু নির্বাচন কমিশনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, রোববারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে মনোনয়ন পত্র উত্তোলনের সময়সীমা সোমবার এবং মঙ্গলবার আরো দুদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এসময় মনোনয়ন পত্র জমা চলমান থাকবে।
নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার করা হবে কি না আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ডোপ টেস্টের ফলাফল দিতে দেরি হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে শুরুর দিনে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি প্রার্থীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কোন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেননি।
প্রার্থীদের ভাষ্যমতে, গত ২৮ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী প্রতিবেদন পাননি। সে কারণে তারা শুরুর দিনে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারছেন না।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অধিক সংখ্যক প্রার্থীর ডোপ টেস্ট করতে গিয়ে ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে। আজ সোমবার বিকেলের মধ্যে ডোপ টেস্টের ফলাফল পাওয়া শুরু হবে। মঙ্গলবার থেকে উৎসব মুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমাদান শুরু হবে বলে জানান তারা।
এর আগে ছয় দিনব্যাপী চলা মনোনয়ন পত্র বিতরণ কার্যক্রম শেষে ৩৮৭ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৩১৮ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদে ৬৯ জন মনোনয়ন তুলেছেন। এরমধ্যে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ৭ জন, এজিএস পদে ৮ জন লড়ছেন।
এই নির্বাচনে ১০ টি প্যানেলে ১৬৩ জন ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। প্যানেলগুলো হলো, গণ ছাত্রজোট, ছাত্রদল, সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ, ছাত্রশিবির, নাজমুস সাকিব, আফরিন জাহান, তৌহিদুল ইসলাম, আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য, অপরাজেয় ৭১ জাগ্রত ২৪।
রাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ২৩টি, সিনেটে ৫টি এবং হল সংসদে ১৫টি পদে ভোট হবে। মোট ভোটার ২৪ হাজার ৮৯২ জন।